![](https://sp-ao.shortpixel.ai/client/to_auto,q_glossy,ret_img,w_1024,h_1018/https://chitrosutra.com/wp-content/uploads/2023/01/ab-1-1024x1018.jpg)
আসমা বীথি
যে ফোঁটা বা বিন্দু থেকে চিত্রের সূচনা হলো, অক্ষরের জন্ম হলো, ভাষা কথা বলতে শুরু করলো, কাব্যভাবের উদয় হলো, বিস্তার ঘটলো শিল্পকলার তা নিয়ে আগ্রহ হলো নতুন করে। আরও অনেক ইচ্ছের মতো বাস্তবতার ঘষা লেগে এও একদিন হারিয়ে যাবে জানা কথা। তবু ইচ্ছেটাকে যত বেশিদিন ধরে রেখে নিজেদের চিন্তাভাবনাগুলোকে বিশ্বচিন্তার সাথে মিলিয়ে একটা বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি করা যায় এমনতর ভাবনা আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছে।
আরও একটা নতুন বছর ঢুকলো। কালের শরীরে ধুলোর আস্তর ভারী হলো। আরও একটা নতুন আয়োজন। কিংবা বলা যেতে পারে, পুরনো গান নতুন সুরে গেয়ে ওঠা।
বড় কোনও চিন্তা নেই। শিল্প-সংস্কৃতি উদ্ধার-পুনরুদ্ধারের এজেন্ডা হাতে নেই। পরিবর্তনের ডাক নেই। কেবল পূর্বসূরীদের হেঁটে যাওয়া ভূমিকে স্পর্শ করে আরেকবার হাঁটতে চাওয়া, ভূমি যেন টের পায় পায়ের পাতার স্পর্শ। রং, রূপ, রেখা কিভাবে, কেমনতর চিন্তা-ভাবনায় আঁচড় কেটে যাচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকা সময়কালে তার সামান্যতম অংশীদার হতে চাওয়া। শিল্পের সমস্ত শাখাতেও বিস্তার সম্ভব নয়। যে ফোঁটা বা বিন্দু থেকে চিত্রের সূচনা হলো, অক্ষরের জন্ম হলো, ভাষা কথা বলতে শুরু করলো, কাব্যভাবের উদয় হলো, বিস্তার ঘটলো শিল্পকলার তা নিয়ে আগ্রহ হলো নতুন করে। আরও অনেক ইচ্ছের মতো বাস্তবতার ঘষা লেগে এও একদিন হারিয়ে যাবে জানা কথা। তবু ইচ্ছেটাকে যত বেশিদিন ধরে রেখে নিজেদের চিন্তাভাবনাগুলোকে বিশ্বচিন্তার সাথে মিলিয়ে একটা বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি করা যায় এমনতর ভাবনা আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছে। চিত্রকলা, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র—এই তিনটি মাধ্যমের নিবিড় যোগাযোগসূত্রকে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করার ইচ্ছে হলো। সেই ইচ্ছের নাম আমরা রাখলাম ‘চিত্রসূত্র’।
প্রথম সংখ্যার জন্য বিভিন্ন বিভাগে আমরা মোট ১৭ টি লেখা দিয়ে শুরু করছি। এ-বছর শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদের জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হলো। জয়নুল আবেদিনের সমসাময়িক সফিউদ্দীন আহমেদ শিল্পচর্চার কোন ধারাটিকে পরিপুষ্ট করে গেছেন "সর্বশেষ কুলপতির প্রস্থান" লেখায় তা উন্মোচন করেছেন আবুল মনসুর। চল্লিশের দশকের শিল্পীসাথীদের ও সে-সময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের কাজের প্রবণতার সাথে তুলনায় ও সম্পর্কে সফিউদ্দীন আহমেদের কাজের বৈশিষ্ট্য ও বিশিষ্টতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এই লেখায়। বলা যায়, এই মূল্যায়ন সমকালীন শিল্প-বিশ্বের একজন উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধির উপর আলো ফেলেছে। গুরুত্ব বিচার করে শিল্প সমালোচক আবুল মনসুরের লেখাটি চিত্রসূত্রের পাঠকদের জন্য আবার প্রকাশিত হলো।
গত শতকের সত্তর দশকের শিল্প আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক শিল্পী অসিত পাল। কলকাতার কলেজ অফ আর্টস এন্ড ক্রাফটস্ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন ন্যাটিভ আর্ট অফ চিৎপুর শীর্ষক গবেষণাকর্মে। শিল্প-বিষয়ক লেখালেখিতেও তিনি সরব, সম্পাদনা করেছেন শিল্প সম্বন্ধীয় বিভিন্ন গ্রন্থ। এমন একজন শিল্পী-যোদ্ধার ধারাবাহিক আত্মস্মৃতিমূলক রচনাটি আমাদের জন্য বিশেষ প্রেরণার।
অঁরি মাতিসের "নোটস অফ এ পেইন্টার" (১৯০৮) গদ্যটির বাংলা ভাষান্তর করেছেন সন্দীপন ভট্টাচার্য। শিল্পী, প্রকাশক, অনুবাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পর্কে নতুন করে বিছু বলবার নেই, মনোযোগী পাঠক মাত্রই জানেন। আর মাতিসের ড্রয়িঙের অভিব্যাক্তি ও শক্তিমত্তা দেখে মুগ্ধ হননি এমন দর্শক কম আছে। স্থিরবস্তু, নিসর্গ-চিত্রের চাইতেও কেন তিনি মানুষের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করতেন, কী প্রণোদনা কাজ করতো! আমরা যখন একটি মুখের ছবি দেখি, তখন আসলে কী দেখি! কোন ছবি দ্বিতীয়বার দেখার দরকার পড়ে না, আর কোন ছবিটি ফিরে ফিরে দেখি। সেই ছবিটিই আবার দেখি যেখানে দেহসৌষ্ঠব ও কমনীয়তার বাইরে গিয়েও আলাদা কিছু মাত্রা ও গুণ যুক্ত আছে। মাতিস সম্ভবত সেই মাত্রা বা গুণের কথাগুলোকেই ইঙ্গিত বা চিহ্নিত করতে চেয়েছেন বিভিন্ন প্রসঙ্গকে উপস্থাপিত করে—যা নিছক সৌন্দর্য ও অনুলিপির অধিক কিছু।
বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ বা ফরাসি নবতরঙ্গ স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত। চলচ্চিত্র আন্দোলনে এর প্রভাব সুদুরপ্রসারী। সেই আন্দোলনকে ফিরে দেখার প্রয়াস চিত্রসূত্রের এই সংখ্যার তিনটি লেখায়। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক ও নারীবাদী লরা মালভির সাক্ষাৎকার, ফরাসি ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের গবেষক শার্লট লিলি হ্যানসন লয়ির প্রবন্ধ এবং বিশ্বনন্দিত সিনেমাটোগ্রাফার রাউল কুতার বিষয়ক লেখাটিতে আমরা ফরাসি নবতরঙ্গের বহুমাত্রিক দ্যোতনা পাব।
বিশ্বজুড়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে কয়টি নাম বহুল আলোচিত, তার মধ্যে অন্যতম সারবিয়ান চলচ্চিত্রাকার বরিস মিটিচ। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ইন প্রেইজ অফ নাথিং ভিন্নধারার দর্শকদের জন্য একটি নতুন ধারণা নিয়ে আসে। যদিও তিনি তাঁর এই চলচ্চিত্রে সমস্ত নতুন ধারণার অন্তঃসারশূন্যতার দিকেই এক অদৃশ্য তির ছুড়েছেন বারবার। চলচ্চিত্রটি ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে দেবাশীষ মজুমদারের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি আগ্রহীদের অনেক কৌতূহল মেটাতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।
চলচ্চিত্রের ইতিহাসকে বোঝার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্রের পরিপ্রেক্ষিত ও ধারাবাহিকতা বোঝার বিকল্প নেই। মাহমুদুল হেসেনের এই লেখাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গবেষক ও অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের জন্য।
আলোকচিত্রের তিনটি তিন ধরনের মৌলিক লেখা পাঠকদের ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা দেবে আশা করি। নূরজাহান বেগম শুধু বেগম সম্পাদিকা নন, বরং একটি বিশেষ কালের প্রতিনিধিও। তাঁর সাথে কাটানো মুহূর্ত-অভিজ্ঞতা ও বিশেষ মুখচ্ছবি আমাদেরকে দিয়েছেন আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া।
শিল্প, বিশেষ করে আলোকচিত্রের ক্ষেত্রে কোন ছবিটি ভাল বা ভাল নয়, পুরস্কারযোগ্য বা নয়, জনমানসের ক্ষেত্রে কিংবা জাতীয় বা আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে তা কীভাবে বিবেচিত হয়—সাইদ সুমন তেমনই কিছু প্রশ্ন রেখে গেছেন।
একইভাবে ইমেজের পেছনের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন পাভেল পার্থ। রানা প্লাজার আলোকচিত্রে উধাও থেকেছে রাষ্ট্র ও জনগণের উৎপাদনশীলতার সম্পর্ক, শ্রেণি প্রশ্নের ঐতিহাসিকতা এবং প্রাণ ও প্রকৃতির বিরাজমানতা। তিনি তাঁর লেখায় কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
ঠিক এই লেখাটির সূত্র ধরেই যেন হাজির হলেন আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ তাঁর ছবিগল্প নিয়ে। ২০১৩ সালে এই ভয়াবহ ঘটনার পরপরই কিছু শ্রমিকের জীবন অনুসরণ করেন তিনি। উনিশটি ছবিতে রয়েছে তাঁদের বেঁচে থাকার গল্প। ছবির সাথে রইল আলোকচিত্রীর এ-বিষয়ক ভাবনাও।
আলোকচিত্রী মইনুল আলমের তিন দশক আগে তোলা ম্রো জনগোষ্ঠীর বাইশটি ছবি রইল চিত্রশালায়। পঁয়ত্রিশ মিলিমিটার ফরমেটের ফুজি কালার ফিল্মে ধারণ করা ছবিগুলো তৎকালীন ম্রো সংস্কৃতির অধুনালুপ্ত অনেক উপাদানকে চোখের সামনে তুলে ধরবে।
গঙ্গার সামনে গুহায় বসে এক সন্ন্যাসী বলেছিলেন "একাই দেখা হয়।" একা মানুষ কিভাবে জগতের অসীম সব রহস্যের খোঁজ পেয়েছিল? সময়ের ভিতর দিয়ে অসংখ্য সময়কে দেখার চোখ কোন মানুষ অর্জন করে? রূপের ভেতর অরূপের সন্ধান কোন সে কবির কাজ? শিল্পীরা আসলে কোন অপ্রত্যাশিতের খোঁজ করে যায়? হিন্দোল ভট্টাচার্যের "বিন্দু ও বিসর্গ"-এর প্রথম পর্বটি রইলো মুক্তচিন্তা বিভাগে।
এছাড়াও আছে গত বছর প্রকাশিত দুটি বইয়ের উপর আলোকপাত ও আমাদের সময়ের মূল্যবান একটি চিত্র প্রদর্শনীর পর্যালোচনা।
শুভানুধ্যায়ী, লেখক-পাঠক সবার জন্য রইল অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
চমৎকার প্রয়াস।
নিয়মিত পড়বো আশা করছি…
অনেক ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন। আপনাকে ফেসবুক পেইজেও যুক্ত থাকার অনুরোধ রইল।
https://www.facebook.com/Chitrosutra/