রাউল কুতার : গদারের নির্ভরতা

0
437

ক্যামেরা হাতে রাউল কুতারের উদ্ভাবনী কাজ তাঁকে ফরাসি নব তরঙ্গের (নিউ ওয়েভ) অন্যতম প্রধান সিনেমাটোগ্রাফারে পরিণত করেছিল। নব তরঙ্গের অন্যতম পরিচালক জ্য-লুক গদার ও ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর সঙ্গে কুতার প্রায় এক দশক কাজ করেছেন। গদারের বারোটির বেশি চলচ্চিত্রে যুক্ত থেকেছেন, ঊনিশশ ষাট থেকে সাতষট্টি পর্যন্ত গদারের একটি চলচ্চিত্র বাদে বাকি সবগুলো চলচ্চিত্রেই রাউল কুতার সিনেমাটোগ্রাফার হিসাবে ছিলেন। গদার-কুতার জুটির শেষ কাজটি ‘ফার্স্ট নেম: কারমেন’।

ঊনিশশ চব্বিশ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন রাউল কুতার। বাবা ঔষধের কোম্পানিতে হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। স্কুল পাশ করার পরে কুতার কেমিস্ট্রিতে পড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু অর্থাভাবে আর পড়াশোনা করা হয়নি। একটি ফটোল্যাবে চাকরি দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। পরবর্তীতে ফরাসি ম্যাগাজিন ‘ইন্দোচায়না’-এর ফ্রিল্যান্স ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।

রাউল কুতার (১৯২৪-২০১৬)

জ্য-লুক গদারের সাথে কুতারের প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা ছিল ঊনিশশ ঊনষাট সালে করা বু দ্য্য সুফল (যার ইংরেজি নামকরণ ব্রেথলেস) সিনেমার মাধ্যমে। প্রযোজক জর্জেস ডি বিউগার্ড গদার ও রাউলের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বু দ্য কে আধুনিক ফরাসি চলচ্চিত্রের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরায়, প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহারে ডকুমেন্টারি ধাঁচে শ্যুটিং-এর জন্য বু দ্য সুফল একদিকে যেমন ফরাসি নিউ ওয়েভের সিগনেচার অন্যদিকে আধুনিক ফরাসি চলচ্চিত্রের অন্যতম বাঁকবদলকারী চলচ্চিত্রও। অবশ‌্য শুরুতে গদার অন্য আরেকজন সিনেমাটোগ্রাফারের সঙ্গে কাজ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। পরবর্তীতে সিনেমার ইতিহাসে অনবদ্য ডিরেক্টর-সিনেমাটোগ্রাফার জুটিতে পরিণত হন গদার-কুতার।

নিউ ওয়েভ সময়কালে গদারের সাথে কুতারের কাজকে দুইভাগে ভাগ করা যায়- সাদা-কালো চলচ্চিত্র, যেগুলো ফুল ফ্রেমে শ্যুট করা হয়েছিল এবং রঙিন চলচ্চিত্র, যেগুলো সবই এনামরফিকে (ওয়াইডস্ক্রিন) শ্যুট করা হয়েছিল (ঊনিশশ সাতষট্টি সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য চাইনিজ বাদে)। সাদা-কালো চলচ্চিত্রগুলো, বেশিরভাগই কম বাজেটে শ্যুট করা হয়েছিল, হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরার কাজ এবং প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করে। চাকচিক্যহীন, ডকুমেন্টারি ঘরানার চলচ্চিত্রগুলো মূলত গদারের স্টাইল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

লম্বা ট্র্যাকিং শট আর দীর্ঘ লেন্সের ব্যবহার ও হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা; এই তিনের সমন্বয়ে গোটা ষাটের দশকে ফরাসি নিউ ওয়েভের ‘চোখ’ হয়ে ওঠেন রাউল কুতার। আশি এবং নব্বই-এর দশকে এসে তার কাজ আরও পরিমার্জিত হয়ে ওঠে। কিন্তু ক্যামেরা, লেন্স এবং ফিল্ম স্টকের উন্নতির সাথে সাথে তিনি ডকুমেন্টারি পদ্ধতিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলেন। রাউল কুতার মোটমাট আশিটি চলচ্চিত্রে সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন, পরিচালক হিসেবে নিজে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন বর্ণিল জীবনে। বেঞ্জামিন বারজেরি প্রণীত  রিফ্লেকশনস্: টোয়েন্টি ওয়ান সিনেমাটোগ্রাফারস্ এট ওয়ার্ক গ্রন্থে অন্যান্য স্বনামধন্য সিনেমাটোগ্রাফারদের আলাপে বিশেষভাবে উল্লেখ্য রাউল কুতার। সেই আলাপেরই অংশবিশেষ এই লেখাটি।

তৎকালীন কাইয়ে দ্যু সিনেমা  ম্যাগাজিনে কাজ করত একদল তরুণ-তুর্কি যারা বেশ শোরগোল তুলে বলেছিল যে, ‘একদল বুড়োভামেরই কেবল সিনেমা বানানো উচিত, আর আমরা তরুণরা কিছু করতে পারব না, এমন কোনো কারণই নাই’। এমতন উক্তির পিছনে যথেষ্ট কারণ ছিল কেননা সেসময় তরুণদের জন্য ফিচার চলচ্চিত্র নির্মাণ করা বেশ কঠিনই ছিল।

এই প্রসঙ্গে কুতারের মতামতটি প্রণিধানযোগ্য, ‘এমন একটি শ্যুটিং স্ক্রিপ্ট দেখাতে পারবেন না যা খুব লম্বা দৈর্ঘের এবং রচয়িতা হয়তো সেটাতে কাঁটছাট করতে চাইবেন না। ফলে দৃশ্য ধারণের সময় আপনি এমন সব দৃশ্য নির্মাণে সময় ব্যয় করেন, যা আসলে এডিটিং রুমে গিয়ে শেষ হয়। পিছনে ফিরে তাকালে দেখবেন অধিকাংশই (নব তরঙ্গের অঁত্যর চলচ্চিত্রকার) শেষ পর্যন্ত সেইসব স্থানে অধিষ্ঠান হয়েছেন একদা তারা যাদেরকে বা যে স্থানটিকে সমালোচনায় ভাসিয়েছিলেন। আমার মতে, যিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন; একজন প্রকৃত বিপ্লবী, তিনি হলেন গদার।’

রাউল কুতার, সর্ববামে, দ্য সফট্ স্কিন (১৯৬৪) চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণের একটি মুহুর্ত

শুরুতেই উল্লেখ করেছি যে গদারের সঙ্গে কুতারের গাঁটছড়াটি অবিস্মরণীয়। কুতার সারাজীবন বিভিন্ন আলোচনায়, সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে বলেছেনও। কিন্তু এই মেলবন্ধনটি খুব একটা সহজও ছিল না। কুতার আমাদের জানাচ্ছেন, ‘শুরুর দিকে আমার কাজে গদার খুব একটা খুশি ছিলেন না, তবে আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলাম এবং শেষতক যা আমাদের সম্পর্কটা দৃঢ় করে তোলে। বু দ্য সুফল-এর ভাবনাটি ব‌্যক্ত করার সময় গদার আমাকে বললেন যে আমরা একটা প্রতিবেদনধর্মী চলচ্চিত্র বানাতে চাই। তার মানে দাঁড়াল পুরো চলচ্চিত্রটি হ্যান্ডহেল্ড শ্যুট করা হবে এবং কোনো কৃত্রিম আলো ছাড়া! কিন্তু এখানে মূল ব্যাপারটা ছিল ফরাসি চলচ্চিত্রের চলমান ঐতিহ্য থেকে বের হয়ে এসে আরও বাস্তবধর্মী আলোকচিত্র বা চিত্র ধারণ করা। এর আগে আমাকে কেউ কখনো পুরো একটা ফিকশন ফিল্ম হ্যান্ডহেল্ড শ্যুট করার প্রস্তাব করেনি। অব‌শ্য এটা ভুলে গেলেও চলবে না যে, আমাদের চলচ্চিত্রটির কোনো বাজেট ছিল না ফলে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার ছাড়া লোকেশনে হ্যান্ডহেল্ড শ্যুট করাটাই আমাদের জন্য সুবিধার ছিল। সে সময় গদার কয়েকটি টেকনিক এপ্লাই করতেন যার একটি ছিল একাডেমি রেশিওতে সাদা-কালো (অনুপাত ১.৩৭:১ ) এবং অ্যানামরফিক (ওয়াইড স্ক্রিন) ফরমেটে রঙ্গিন চিত্রায়ন।’

আমরা যদি গদারের চলচ্চিত্রসমূহ একটু মনে করতে চেষ্টা করি দেখব প্রায় সমস্ত চলচ্চিত্র প্রায় একই কাঠামোর উপর নির্মিত, যেখানে অসম্ভব প্রেম প্রায়শই কারুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। বু দ্য্য সুফল নির্মিত হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিল যে খুব কারিকুরি না করে, তেমন কসরত না করেও ক‌্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লেই একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ফেলা সম্ভব। তাই সেসময় প্রচুর সিনেমাটিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত বিপর্যয়ে পরিণত হয়। এই চটজলদির অনুকরণকারীরা ভুলে গিয়েছিল যে জ্য-লুক শুধু মেধাবীই নন, একজন প্রতিভাবান মানুষও ছিলেন।

আমরা জানি, গদারের বু দ্য সুফল একটি কাল্ট চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র ঘিরে নানা অভিজ্ঞতা আর উদ্ভাবনী শক্তির উল্লেখ কুতারের কথামালায় আমরা জানতে পারি। যেমন কুতার বলছেন, ‘চলচ্চিত্র বিষয়ে তখন আমার ওই অর্থে তেমন ধারণা ছিল না। আমি যদি আগেভাগে জানতে পারতাম যে লাইট ছাড়া হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরায় দৃশ্যধারনের ব্যাপারটি কেমন হতে পারে, আমি হয়তো রাজিই হতাম না। কারণ তখন পর্যন্ত এরকম কিছু বিশ্বাসই করিনি যে এই পদ্ধতি এটি ঠিকঠাক কাজ করবে। প্রায় পুরো চলচ্চিত্রটি আমি এক্লেয়ার ক্যামফ্লেক্স ক্যামেরায় শ্যুট করি। কেবল সাক্ষাৎকারের দৃশ্যটি শ্যুট করা হয়েছিল সিনক্রোনাইজ সাউন্ড মিচেল ক্যামেরায়। যদি বু দ্য সুফল  চলচ্চিত্রটি মনোযোগ দিয়ে দেখে থাকেন, দেখবেন অভিনেতাদের কথা বলার ধারণ-ছন্দ একটু অদ্ভুত রকমের; তাদের সংলাপের লাইনের মধ্যে প্রায়ই বিরতি আছে। এর কারণ হল শট চলাকালীন গদার প্রায় সমস্ত সংলাপ আগে একবার করে বলছিলেন আর অভিনেতারা তার প্রতিটি কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন।’ আলোক প্রক্ষেপণ বিষয়ে কুতার যোগ করছেন, ‘আমার প্রথম দিকের বেশকিছু চলচ্চিত্রে লো-কনট্রাস্ট লাইটিং-এর চাইত রেমব্রান্ট লাইটিং করতেই পছন্দ করতাম। একই সাথে আমি যেভাবে আলোর (লাইটিং) ব্যবস্থাপনা করেছি তাতে আমি সন্তুষ্ট। খুব অল্প সময় এবং উপায়ে আমি এমন ফলাফল পেয়েছি যা খুব একটা খারাপ ছিল না।’

আমি যত পরিচালকের সাথে কাজ করেছি তাদের মধ্যে একমাত্র গদারের সাথেই ঝুঁকি নেয়া যেত।

ফরাসি নব তরঙ্গের দিকপাল চলচ্চিত্রকার যারা ছিলেন তাদের অনেকেই ঝুঁকি নিতে পছন্দ করতেন, বলা ভাল ঝুঁকি নিয়েই তারা তাদের সৃষ্টির উন্মাদনায় যুক্ত ছিলেন। কুতারের কথায়ও আমরা সেটির ছায়া পাই, ‘আমি যত পরিচালকের সাথে কাজ করেছি তাদের মধ্যে একমাত্র গদারের সাথেই ঝুঁকি নেয়া যেত। আমরা যখন বেশ ঝামেলাপূর্ণ বা কঠিন কিছু চেষ্টা করতাম, তাকে প্রায়শই সতর্ক করতাম যে সমস্যা হতে পারে। গদার বলতেন ‘বেশ, চলো চেষ্টা করে দেখি’ এবং আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে এই চেষ্টায় যদি সফলকাম না হই তাহলে আমরা আবারও শ্যুট করব। আর এই বিষয়টি আমাকে গদারের সঙ্গে যুক্ত থেকে এমন কিছু করার সুযোগ এনে দিয়েছিল যা আমি অপরাপর পরিচালকদের কাছ থেকে পেতাম না। উক্ত পরিচালকদের সাথে কোনো একটা দৃশ্যের রি-শ্যুট করা প্রায় অসম্ভব ছিল, অবশ‌্য তাদের ব্যস্ত শিডিউলের চাপ এর অন্যতম কারণ বলেই মনে করি।’

এবং সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কুতার বেশ জ্বলজ্যান্ত স্বাক্ষ‌র। তিনি জানাচ্ছেন, ‘কখনই জানতাম না যে পরের দিন কী শ্যুট করতে যাচ্ছি। একটা ঢাউস নোটবুকে লেখা দৃশ্যটি নিয়ে সকাল সকাল পৌঁছাতেন গদার, এসেই দৃশ্যটি ব্যক্ত করতেন সবার কাছে।

অধুনা বিশ্বে, লিখিত রূপের সাজানো-গোছানো স্ক্রিপ্টবিহীন চলচ্চিত্রের স্বাদ আমরা আস্বাদন করছি। তার মানে নিশ্চয় এ-ও নয় যে সংশ্লিষ্ট পরিচালকের ভাবনায় কোনো স্ক্রিপ্টই নাই! এই বিষয়টি নবতরঙ্গের সময়ও বিদ্যমান ছিল এবং সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কুতার বেশ জ্বলজ্যান্ত স্বাক্ষ‌র। তিনি জানাচ্ছেন, ‘কখনই জানতাম না যে পরের দিন কী শ্যুট করতে যাচ্ছি। একটা ঢাউস নোটবুকে লেখা দৃশ্যটি নিয়ে সকাল সকাল পৌঁছাতেন গদার, এসেই দৃশ‌্যটি ব‌্যক্ত করতেন সবার কাছে। নোটবুকে যা যা লেখা আছে তার সবটা যদি সময়ের আগেই করে ফেলতে পারতাম, তাহলে তিনি সেদিনের শুটিং প্যাকআপ করে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন আমাদের যা ওই চলচ্চিত্রের সংশ্লিষ্ট প্রযোজকের জন্য ছিল সত্যিই বিরক্তিকর। আমার মতে চলচ্চিত্র নির্মাণের রহস্যটা বজায় থাকা দরকার। এটা অনেকটা গর্ভাবস্থাকালীন আল্ট্রাসাউন্ডের মতো; ছেলে না মেয়ে এটা আগে জেনে কি হবে? এটা আমার চলচ্চিত্র-কাঙ্খার অংশ; কী ঘটতে যাচ্ছে তা না জেনেও আমি তাৎক্ষনিক উদ্ভাবনী পদ্ধতি পছন্দ করি। সেসময়ে আমাদের টিমটিই প্রথম যারা তথাকথিত পশ্চিমা ডলি ব্যবহার করেছিলাম। বাঁক নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে তিন চাকাঅলা একটা ডলি ছিল, যা পুরো ফিল্মটিকে একটি গতিশীল চেহারা এনে দিতো।’

ফ্রেমিং এর ক্ষেত্রে ত্রুফো আগে থেকেই বলে দিতেন যে তিনি ফ্রেমে কি দেখাতে চান, অন্যদিকে গদার বলতেন যে কি কি তিনি ফ্রেমে দেখতে চান না।

রাউল কুতার

শুরুতেই বলছিলাম যে রাউল কুতার কেবল গদারের সঙ্গেই কাজ করেননি, কাজ করেছেন ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর সঙ্গেও। ত্রুফোর সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতাও অনন‌্য। সে প্রসঙ্গেও তিনি উল্লেখ করেছেন নানা বিষয় এবং সেসব আলোচনায় কিছু তুলনীয় বিষয়ও উঠে এসেছে। যেমন চলচ্চিত্রের ফ্রেমিং বিষয়ে কুতার বলেছেন, ‘ফ্রেমিং-এর ক্ষেত্রে ত্রুফো আগে থেকেই বলে দিতেন যে তিনি ফ্রেমে কি দেখাতে চান, অন্যদিকে গদার বলতেন যে কি কি তিনি ফ্রেমে দেখতে চান না। আমি যখন জ্য-লুকের জন্য ফ্রেমিং করছি তখন চরিত্রগুলোকে অনুসরণ করছি না, কার্ভ বা বক্ররেখাসমূহকে অনুসরণ করছি। লোকে কি দেখল সেটা গদার খুব একটা পাত্তা দিতেন না। ক্যামেরা মুভমেন্টের ব্যাপারে তা সেটা সরলরেখাই হোক বা বক্ররেখা, যাই হোক না কেন। অবশ্য জুলে এণ্ড জিম (ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো, ১৯৬২) চলচ্চিত্রের নিপুণ আদলের রূপায়ন বেশ জটিল ছিল কারণ সেসময় আমাদের কাছে সময় এবং বাজেট দু্ই-ই ছিল। তাছাড়া ত্রুফোর কাছে শট লিস্ট ছিল তাই শ্যুটের আগেই লাইটিং প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছিল। পিয়ঁরে শোয়েডর্ফের দ্য থ্রি হান্ড্রেড সেভেন্টিন্থ প্লাটুন যুদ্ধ বিষয়ক ছবির মধ্যে অন্যতম সেরা ছবি, অন্তত আমার অভিজ্ঞতায়। যেমন ধরুন, আপনি কখনোই শত্রুকে চাক্ষুষ করছেন না, আপনি কেবল সিলুয়েটগুলিকে আলাদা আলাদাভাবে বা শরীরগুলোকে প্রত‌্যক্ষ করছেন।’

চলচ্চিত্র কোনও একক কারিশমার বিষয় নয়। আর এই বিষয়টি নিয়ে কুতারের একটি দারুণ উক্তি রয়েছে। সেটির উল্লেখ করেই শেষ করছি রচনাটি।

থিয়েটার বা চলচ্চিত্র প্রযোজনার দৃশ্যে অভিনেতাদের সাজসজ্জা, মঞ্চসজ্জা ও বিন্যাস, স্টোরিবোর্ডিং, ভিজ্যুয়াল থিম এবং সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে দৃশ‌্যশিল্প ও নির্দেশনার বদৌলতে বর্ণনামূলক আখ‌্যানটি উপস্থাপিত হয়। অর্থাৎ চলচ্চিত্র কোনও একক কারিশমার বিষয় নয়। আর এই বিষয়টি নিয়ে কুতারের একটি দারুণ উক্তি রয়েছে। সেটির উল্লেখ করেই শেষ করছি রচনাটি। তিনি বলেছেন, ‘যদি সুযোগ থাকে এবং পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হয় তাহলে একজন সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে যে সময়টি আপনি আলোক প্রক্ষেপণ বা নিয়ন্ত্রণের পিছনে ব্যয় করবেন সেখানে মিতব‌্যয়ী আচরণ করুন, ধরে নিন আপনার সেই বেঁচে যাওয়া সময়টি পরিচালক ভালভাবেই ব্যবহার করবেন। আমি মনে করি, দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফির জন্য কেউ কখনও একটি চলচ্চিত্র দেখতে যায় না। এ-র সবচেয়ে ভালো উদাহরণ বু দ্য সুফল। আপনি যখন চলচ্চিত্রটি দেখে অভিভূত হয়ে হল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন; আপনি কিন্তু এটির পরিচালনা, অভিনয় বা সিনেমাটোগ্রাফির ঘোর থেকে চট্ করে বেরিয়ে আসতে পারেন না। আপনার মনে হয় যে, ফিল্মটি নিখুঁত! বস্তুত কোনো চলচ্চিত্র কখনো নিখুঁত হয়ে উঠতে পারে না।’ 

সূত্র: রিফ্লেকশনস্: টোয়েন্টি ওয়ান সিনেমাটোগ্রাফারস্ এট ওয়ার্ক: বেঞ্জামিন বারজেরি

Top of Form

Bottom of Form

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে