শার্লট লিলি হ্যানসন-লয়ি। লণ্ডনের কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ আর্ট-এর স্নাতক। ফরাসি ধ্রূপদী চলচ্চিত্র বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ চলাকালে তার গবেষণাপত্র এন ইনভেস্টিগেশন ইন টু দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অফ উইম্যান ইন ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ বেশ সাড়া জাগায়। আলোচ্য লেখাটি শার্লটের তিন পর্বে বিভক্ত সেই গবেষণা পত্রেরই একটি অধ্যায়ের অনুবাদ।
আমরা যখন ক্যামেরার সামনে নারীদের উপস্থিতি ও উপস্থাপনা বিষয়ে ময়না তদন্তে যাব, তখন আমাদের অবশ্যই ক্যামেরার পিছনে কাজ করা নারীদের অভাব এবং ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ সিনেমায় চলচ্চিত্র তৈরির প্রক্রিয়াতে তাদের অবদানগুলোও অন্বেষণ করতে হবে, নিঃসন্দেহে। চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নারী আধিকারীদের অংশগ্রহণের এই অভাব সেলিয়ারের মতো সমালোচকদের কাছে নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্রগুলোকে প্রধানত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সৃষ্টি হিসাবে ব্যখ্যা করার নিমিত্তে জায়গা ছেড়ে দেয়।
চলচ্চিত্রের এই দিকটি আগেও আলোচিত হয়েছে যে, অত্যঁর চলচ্চিত্রসমূহ (চলচ্চিত্র নির্মাণের তত্ত্ব যেখানে পরিচালককেই একটি চলচ্চিত্রের প্রধান সৃজনশীল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়) পরিচালকদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সরাসরি প্রতিফলিত করে, এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অন্যান্য কুশীলব যারা আছেন তাদের দায়িত্ব বা বিশ্বাসযোগ্যতাকে হটিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, সেসিলে দকুজি ছিলেন ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ-এর অন্যতম দু’জন নারী সম্পাদকের একজন এবং রোমারের সঙ্গে সম্পাদনায় যুক্ত হওয়ার আগে ত্রুফো’র লে কোয়াত্রে সে কুঁ (১৯৫০) এবং গদারের আ বু দ্য সুফল্ (১৯৬০)-তে কাজ করেছিলেন। ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভের যুগান্তকারী সম্পাদনা কৌশল, যেমন জাম্প-কাট-এর ব্যবহার, প্রায়শই আজ স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল প্রভাবক হিসাবে আদৃত হয়েছে। প্রখ্যাত পরিচালক তারানতিনো, যিনি প্রকাশ্যে গদারকে নিজের অনুপ্রেরণা হিসাবে ঘোষণা করেছেন, তিনি আমাদের বলছেন, ‘(এই পরিচালকরা) সম্পাদনার ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়াটি আমাদের সামনে হাজির করেন তা এক কথায় নিয়ম ভাঙার গান।’ আমরা জানি যে গদার আ বু দ্য সুফল্-র সম্পাদনা প্রক্রিয়ার সাথে খুব নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন, তবে অনেক সমালোচকই তাদের লেখায় এ-ও উল্লেখ করেন যে গদার সেসময় কোথাও দকুজি’র নাম উল্লেখ করেননি। স্পষ্টতই দকুজি’র সম্পাদনা প্রক্রিয়া প্রভাবসঞ্চারি ছিল, (দেদি অ্যালেনের মতে দকুজি’র স্টাইল বনি এন্ড ক্লাইড (১৯৬৭) এর সম্পাদনা শৈলীকে অনুপ্রাণিত করেছিল) কিন্তু চলচ্চিত্রের ক্রেডিটলাইনে তার নাম উল্লেখ করার ক্ষেত্রে এই অবদানটুকু সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয়। অ্যাগনেস গুইলেমট, যাকে আমরা প্রায় ভুলেই গেছি; তার জন্যও একই কথা প্রযোজ্য যিনি গদার এবং ত্রুফো উভয়ের সঙ্গেই কাজ করেছিলেন, যার একমাত্র উল্লেখ পাওয়া যায় সিমন্টনের স্বীকারোক্তিতে যেখানে তিনি লিখেছেন ‘তিনি (অ্যাগনেস) বেশকিছু নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্র সম্পাদনা করেছেন,’ এটুকুই। তাহলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায়, অত্যঁর চলচ্চিত্রের আলোচনা-সমালোচনায় শুধুমাত্র পরিচালকদের (পুরুষ তো বটেই) বৈপ্লবিক সম্পাদনা কৌশলকেই স্বীকার করে এবং একই চলচ্চিত্রে নারী সম্পাদকদের অবদানকে হিসেবের বাইরে রাখা হয়।
একইভাবে, সুজান শিফম্যানের উল্লেখ করা যায়, যিনি একজন স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজার হিসেবে ত্রুফো’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কদাচিৎ তার নাম ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ সম্পর্কিত নিবন্ধগুলিতে দেখা যায় তবে সেসব প্রায়শই সংক্ষিপ্ত, অনুল্লেখিত উল্লেখ, বস্তুত তার পুরুষ সহযোগীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে কোথাও হয়তো এক লাইনের সংযোজন। ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ-এর একজন পরিচালকের কাছ থেকে পাওয়া একমাত্র স্বীকৃতি হল আ বু দ্য সুফল্/ ব্রেথলেস (১৯৬০) চলচ্চিত্রের শুরুতে শিফম্যান এবং স্ক্রিপ্ট গার্ল মিশেলের মধ্যে সম্ভাব্য তুলনায়। গদার যেমনটি বলেছেন যে তার চলচ্চিত্রগুলো স্বীয় অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণেরই প্রতিলিপি, তা সত্ত্বেও এই বিষয়টি তর্কযোগ্য যে শিফম্যানের চরিত্রটি এই আন্দোলনে তার সরাসরি প্রতিনিধিত্ব এবং অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ। যদিও তিনি গুইলেমো এবং দকুজির তুলনায় গোটা চলচ্চিত্র সম্পাদন প্রক্রিয়ায় ততটা প্রভাবক ছিলেন না, তবুও তার ন্যূনতম উল্লেখ নারী সম্পাকদের প্রাপ্য প্রশংসার ক্ষেত্রে স্পষ্ট অভাবকেই প্রকাশ করে।
তাহলে ভার্দা ও দুরাসের বিষয়টিকে কীভাবে দেখব? সেলিয়ার দাবি করেন ‘একমাত্র চলচ্চিত্র…যা নারী চরিত্রকে কেবলই গল্পের প্রয়োজনে নয় বরং স্বতন্ত্র একটি বিষয় হিসেবে, একটি চেতনা হিসেবে চিত্রায়িত করেছে’ যা হিরোশিমা মন আমোর (১৯৫৯) এবং ক্লিও দে সেক আ সেত (ক্লিও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন, ১৯৬২)-এ আমরা দেখতে পাই৷ প্রকৃতপক্ষে, উভয় চলচ্চিত্রেই আমরা একজন নারীকে প্রধান চরিত্র অভিনয় করতে দেখি এবং এটি অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত যে হিরোশিমা মন আমোর একমাত্র চলচ্চিত্র যেটির পাণ্ডুলিপি সম্পাদন করেছেন একজন নারী এবং ফরাসি নিউ ওয়েভে অবদান রাখা একমাত্র নারী পরিচালক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল ক্লিও দে সেক আ সেত চলচ্চিত্রটি। সুতরাং, এটি লক্ষ্য করার বিষয় যে, নারীরা কীভাবে বা কোন মাত্রায় সেইসময় প্রতিনিধিত্ব করেছিল, এবং তা ক্যামেরার পিছনে নারী নির্মাতাদের অবদানকে প্রতিফলিত করে কি-না।
‘‘ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভের একমাত্র নারী পরিচালক ভার্দাকে ওই আন্দোলনের একাধারে মা এবং প্রপিতামহী উভয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। সত্যটা এই যে কেউ কেউ তাকে নারীবাদী ভূমিকা অর্পণ করারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে… এই মহত্তম চলচ্চিত্র আন্দোলনে তার স্থানটি কতটা অনন্য সেটি বোঝানোর জন্যই এই কথার উল্লেখ’’। স্ব-শিক্ষিত ভার্দার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ক্লিওদেসেকআসেত (১৯৬২)-এ আমরা দেখতে পাই মামুলি এক গায়ক ক্লিওর বাস্তব সময়ের চিত্রায়ন এবং তার (ক্লিওর) মানসিক বোঝাপড়ার নানান স্তর কেননা সে (ক্লিও) তার মৃত্যুকে বিবেচনা করে এবং প্রামাণিকভাবে জীবনযাপন শুরু করে, আর এজন্যই চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা এবং প্রশংসা দুটোই অর্জন করে ।
টুপির দোকানের যে দৃশ্যে ক্লিও নিজেই নিজের সৌন্দর্যের প্রশংসা করে, সেই দৃশ্যটি রাস্তার দিকে ঘুরে শেষ হয় এবং পরের দৃশ্যেই আমরা ক্লিওকে দোকানের জানালা দিয়ে দেখতে পাই। এখানে, জানালাটি পুং-দৃষ্টির রূপক হিসাবে কাজ করে।
রোলা বাথের কাছ থেকে ধার করে, জনস্টন যুক্তি দেন যে ক্লিও চরিত্রটি নারীর বুর্জোয়া মিথকে উদযাপন করে এবং যৌনতাবাদী মতাদর্শকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয় (ইয়নজিন,২০১১)। নিশ্চিতভাবেই, ভার্দার ফিল্মের মধ্যে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির শনাক্তযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে: ক্লিওর মুখের ক্রমাগত ক্লোজ-আপগুলি স্কোপোফিলিক প্রবণতার উদাহরণ দেয়; ক্লিওর নগ্ন অবয়ব দেখার পর তার বন্ধুর দৃষ্টিতে খেলে যায় শরীরবৃত্তীয় চিরায়ত দাবী যা তার বস্তুবাদী দৃষ্টিরই প্রকাশ এবং ক্লিওর প্রতি আওড়ানো শব্দগুলো (“mon petit/little one, …beauté/beauty, …ma poupée/my doll, …bijou/precious”) আমরা লক্ষ্য করব। যাই হোক, আমার যুক্তি হল যে ভার্দার চলচ্চিত্রটি আসলে ভুল বিষয় উপস্থাপন করে, অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শগুলোকে উন্মোচন করার জন্য পুরুষের দৃষ্টিতে একটি ইমেজ হিসাবে নারীর উপস্থিতি, পক্ষান্তরে এবং বস্তুনিষ্ঠ অবলোকনকেই সমালোচনায় ফেলে দেয়।
ভার্দার এই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহার স্বীয় আত্ম-প্রতিফলনকে সুবিধাজনক পর্যায়ে নিয়ে যায়। নগ্ন দৃশ্যটি ধারণ করার সময়, ভার্দা তার ক্যামেরার দৃষ্টি ক্লিওর ওপর থেকে সরিয়ে ফেলেন ডিস্টরশনের ছলে, ক্যামেরা তারপরে বন্ধুটিকে দেখে, যা দর্শকদের একটি বস্তুনিষ্ঠ দৃশ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। একইভাবে, ক্লিওর অহংকারী ভাবমূর্তির জোরালো উপস্থিতি যেমনটি সে নিজের সম্পর্কে বলে যে ‘যতদিন আমি সুন্দর থাকব, ততদিনই আমি বেঁচে আছি,’ তারপর আয়নায় নিজেকে বারবার দেখার দৃশ্যে দর্শক মুখোমুখি হয় সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবের সঙ্গে, যে-সমাজ নারীকে দর্শনীয় বস্তু হিসেবেই দেখতে চায়। দর্শক হিসাবে আমাদের দৃষ্টিশক্তি প্রতিনিয়তই অবগত হয়ে উঠছে, উদাহরণস্বরূপ, টুপির দোকানের যে দৃশ্যে ক্লিও নিজেই নিজের সৌন্দর্যের প্রশংসা করে, সেই দৃশ্যটি রাস্তার দিকে ঘুরে শেষ হয় এবং পরের দৃশ্যই আমরা ক্লিওকে দোকানের জানালা দিয়ে দেখতে পাই। এখানে, জানালাটি পুং-দৃষ্টির রূপক হিসাবে কাজ করে। ক্লিওর অহংকার সম্পর্কে ভার্দার সহানুভূতিহীন চিত্রায়ন পুরুষের দৃষ্টিকে বিকৃত করে সেটার উপস্থিতির কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। এই প্রসঙ্গে সিনক্লেয়ার লিখেছেন ‘‘দর্শক মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে যদি তারা চলচ্চিত্রটিকে যাকে বলে ‘নারী সংবেদনশীলতার অভিব্যক্তি’ খুঁজে পাওয়ার আশা নিয়ে দেখতে বসে…ভার্দা আমাদেরকে তার নায়িকার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন না, তিনি ক্লিওকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উপস্থাপন করেন যেন পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে কথাবার্তা জারি থাকে।’’
আমি যখন আমার প্রথম চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু করি তখন ফ্রান্সে আরো তিনজন নারী পরিচালক ছিলেন, আমি ভেবেছিলাম, ভাষা হিসাবে আমি চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করব।
উপরন্তু, একজন নারী পরিচালক হিসাবে তার স্বীয় দুর্লভতা সম্পর্কে ভার্দার এই সচেতনতা আমাদের অবশ্যই আমলে নিতে হবে। পরিচালক-জীবন শুরুর কথা বলতে গিয়ে ভার্দা বলেছিলেন, ‘আমি যখন আমার প্রথম চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু করি তখন ফ্রান্সে আরো তিনজন নারী পরিচালক ছিলেন, আমি ভেবেছিলাম, ভাষা হিসাবে আমি চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করব।’ ফলে ভার্দা যেভাবে তার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সে বিষয়ে তিনি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। চলচ্চিত্রের ভিতর দিয়ে নারী সমতার একজন প্রবক্তা হিসেবেই ভার্দা নিজেকে দেখেছেন কেননা তিনি ‘এক নতুন ধারার চলচ্চিত্রের জন্য লড়াই’ হিসাবেই দেখছেন আর তাই তার বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই নারীদের গল্প চিত্রায়নে কেন্দ্রীভূত। তিনি তার নিজের নারীবাদী বিশ্বাসের কথা বলেছেন, ‘(এটি) সম্পর্কে জোরালোভাবে কথা বলার’ প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন এবং যদিও আমরা ক্লিওর বিবর্তনে নারীর একটি বিশেষ অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ উপস্থাপনা দেখতে পাচ্ছি, তবুও একই চলচ্চিত্রের অন্যান্য নারী চরিত্রসমূহ ভার্দার উল্লেখিত মনোভাব উপস্থাপন করে যা মূলত নারী স্বাধীনতা এবং নারী মুক্তি।
ক্লিও দে সেক আ সেত-এ এঞ্জেলের চরিত্রটি যদিও ক্লিওর সহকারীর ভূমিকা, তবুও এই এঞ্জেলের হতাশাব্যঞ্জক অভিব্যক্তিই ক্লিওর চাহিদার প্রতি ইঙ্গিত করে। এটা তো বাস্তবিকই যে যখন পর্দায় ক্লিও অনুপস্থিত, ঠিক তখনই সে একটি অ-সত্তা। যদিও ক্লিওকে আমরা দাবি করতে দেখি যে এঞ্জেলের উপস্থিতি সমালোচনামূলক, যে কীনা ক্লিওর আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করে। অর্থাৎ ভার্দা এখানে ক্লিও সম্পর্কে স্বীয় মতামতই প্রকাশ করেন।
একইভাবে, আর্ট ক্লাসের নগ্ন মডেল ডরথি, পুরুষদের কামার্ত দৃষ্টির ভিতর দিয়ে মূর্ত হয়, সেই ডরথি পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে নারীর স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে সবচেয়ে সরাসরি মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, ‘‘আমার শরীর আমাকে আনন্দিত করে, গর্বিত নয়। আমাকে আমি যতটা দেখি ওরা আমাকে তার চেয়ে বেশি দেখছে। যেন আমি কেবলই একটি আকার, একটি সুখানুভূতি। যেন ব্যক্তি আমি সেখানে ছিলামই না।’’ তিনি বিষয়টি এভাবে ব্যক্ত করেন যে এই অভিজ্ঞতাটি আপাত যৌনক্রিয়ার ইচ্ছা বর্জিত, আবার তা ঐতিহ্যিক হলিউডি স্ট্রিপটিজ দৃশ্যে নারীদেহের বস্তুনিষ্ঠ অভিব্যক্তিরও সমতুল্য রেনৌড সম্মত হন, এই দৃশ্য টিকে ‘চলচ্চিত্রটির অন্যতম দৃশ্য’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে যোগ করেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তার (ভার্দার) চিন্তার সবচেয়ে তীক্ষ্ম বিবৃতি’ স্থাপন করে।
আমার শরীর আমাকে আনন্দিত করে, গর্বিত নয়। আমাকে আমি যতটা দেখি ওরা আমাকে তার চেয়ে বেশি দেখছে। যেন আমি কেবলই একটি আকার, একটি সুখানুভূতি। যেন ব্যক্তি আমি সেখানে ছিলামই না।’’ তিনি বিষয়টি এভাবে ব্যক্ত করেন যে এই অভিজ্ঞতাটি আপাত যৌনক্রিয়ার ইচ্ছা বর্জিত, আবার তা ঐতিহ্যিক হলিউডি স্ট্রিপটিজ দৃশ্যে নারীদেহের বস্তুনিষ্ঠ অভিব্যক্তিরও সমতুল্য.
একইভাবে, চলচ্চিত্রটিতে আমরা নারী চরিত্রদের বারংবার গাড়ি চালানোর দৃশ্যে দেখি, যে কাজটি ঐতিহ্যিকভাবে পুরুষতান্ত্রিক বলেই ধরা হয়। ডরথি নিজে গাড়ি চালায়, ক্লিওর ট্যাক্সি ড্রাইভারও একজন নারী যে কিনা আবার সরাসরি এই বিরল কাজটি সম্পর্কে নিজের বয়ান উপস্থাপন করে: ‘একজন নারীর পক্ষে কঠিন কাজ…বিপজ্জনকও, তবে আমি এই গাড়ি হাঁকানোর কাজটি পছন্দ করি।’ এটি সেই সময়ের জেন্ডার স্টেরিওটাইপের বিরুদ্ধে যায় যখন নারীকে স্রেফ মা বা প্রেমিকা হিসাবে চিত্রিত করা হতো, পাশপাশি এটি পুরুষালি ভূমিকায় নারীর দখল নেওয়ার প্রত্যক্ষ উদাহরণও বটে।
চিত্রায়নের আধুনিকতায়, ক্লিও নিঃসন্দেহে নতুন দিনের নারী মুক্তি ও নারী চেতনার বাহক। ভার্দা তার চলচ্চিত্রে নারীর যৌনতা প্রসঙ্গে নিজস্ব মনোভাব প্রকাশ করার নিমিত্তে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করেন, কতকটা ভাঙচুরও করেন, কিন্তু এই মনোভাব সম্পূর্ণরূপে তার স্বীয় লৈঙ্গিক কারণেই অর্জিত হয়েছিল কি-না তা বোঝা মুশকিল। আমার যুক্তি এই যে, তিনিই ফরাসি নিউ ওয়েভের একমাত্র পরিচালক নন যিনি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বিদ্রোহ করেছিলেন। একজন নারী হিসেবে তার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন, তাকে আলোচনার ঊর্ধ্বে তুলে দিয়েছে, কেননা প্রায়শই গদার এবং ত্রুফোর কাজে আমরা দেখতে পাই কীভাবে স্বাধীন যৌন কাঙ্খার যে-কোনো নারীকে ক্যামেরা ছাড়াই অনিচ্ছুকভাবে খুব আরাধ্য কিছু হিসেবে ফ্রেম ধরা হয়।
সেলিয়ারের মতে, ক্লিও দে সেক আ সেত-এর আগে, হিরোশিমা মন আমোর-এর একটি মনলোগে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা নারী চরিত্রটির স্মৃতি ও আবেগের মধ্যে আলোকপাত করার পাশাপাশি বিষয় হিসাবে নারীর এই ধারণার সাথে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। শুরু থেকেই, রেনে (পরিচালক এলেন রেনে) উভয় লিঙ্গকে সমতার সাথে উপস্থাপন করার জন্য দৃষ্টির ঐতিহ্যিক ব্যবহারকে প্রতিরোধ করেন কারণ আমরা এমানুয়েল রিভা এবং তার প্রেমিককে যৌন আলিঙ্গনে আবদ্ধ দেখতে পাই। ক্যামেরার ফ্রেমে ক্লোজআপ শটগুলোতে দারুণ সৌন্দর্য তুলে ধরে, তবে তা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরের বিষয় কেননা বস্তুত সেটি আমরা বিষমকামী পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করি না বরং আমরা বিষয়টি চোখের নিষ্ক্রিয় দৃষ্টির মাধ্যমে অবলোকন করি। আবার ওই কামুক আলিঙ্গন ও যুদ্ধের অন্তর্মুখী দৃশ্যের বৈসাদৃশ্যে যৌথভাবে পুরুষালি ও মেয়েলি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার রয়েছে। একইভাবে, উপরোক্ত আলোচনাটি এই সমতাকে মূর্ত করে তোলে। যে-মুহুর্তে তিনি রিভার সঙ্গে স্বীয় অভিজ্ঞতা বিষয়ক দ্বিমত পোষণ করেন, তখন রেনে রিভাকে এর বিপরীতে অবস্থান নেওয়ারও অনুমতি দেন, যা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণকে স্বীকার এবং কর্তৃত্বের সমান অনুভূতি প্রদান করে।
তাই চলচ্চিত্রবোদ্ধা আলেহান্দ্রা ম্যাডোলা বলছেন, ‘হিরোশিমা মন আমোর নারীদের ক্ষমতায়িত করেছে কারণ এটি নারী ব্যক্তিগত অন্ধকারাচ্ছন্ন যে অঞ্চল সেখানে টোকা দিয়েছে।’
রিভা নিজেই বলেছিলেন যে এটিই তার প্রথম চলচ্চিত্র যেখানে তিনি কেবল একজন লাস্যময়ী যুবতীর ভূমিকায় নয় বরং একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন, তাছাড়া রেনে এবং দুরাসের গল্পের বর্ণনাও নারী চরিত্রটিকে এক শক্তিশালী ভূমিকায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। জার্মান প্রেমিককে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যাওয়া রিভার আখ্যান, নারী মানসিকতার জটিলতা এবং আবেগকে বেশ সহমর্মিতার সাথ প্রদর্শন করে, যেমনটি আমরা ক্লিও দে সেক আ সেত-এর প্রধান নারী চরিত্রটির ভয় এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতি আলোকপাত করে। হিরেশিমা মন আমোর আমাদেরকে এই টানাপড়েন দেখতে বাধ্য করে যে-প্রধান নারী চরিত্রটি একাধারে সত্য ও মিথ্যা উভয়ই বলে কারণ সে প্রেম-ভালবাসার ক্ষণগুলো ভুলে যেতে ভয় পায়। তাই চলচ্চিত্রবোদ্ধা আলেহান্দ্রা ম্যাডেলা বলছেন হিরোশিমা মন আমোর নারীদের ক্ষমতায়িত করেছে কারণ এটি নারী ব্যক্তিগত অন্ধকারাচ্ছন্ন যে অঞ্চল সেখানে টোকা দিয়েছে।’ আ বু দ্য সুফল্ (১৯৬০)-তে এরকম একটি দৃশ্য আছে যেখানে নারী চরিত্রটি বারংবার বলে চলে যে কেন তার মন খারাপ, কোন সে দুঃখ, কীসের বেদনা…এর সে কিছুই বুঝতে পারে না, যা দর্শকদেরকে নারীমনের চিরায়ত বিষণ্ণতা বোধের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দেয়। একইভাবে, এটি দুরাসের মেল্যাঙ্কোলিয়ার ব্যবহার যা হিরোশিমার তুলনামূলক সংমিশ্রণকে সেই সম্পর্কের পটভূমি হিসাবে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি কাঙ্খার চিরায়ত রূপকে সুপারপোজ করে।
হিরাশিমা মন আমোর-এর ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো যে যদিও এটি অট্যুর চলচ্চিত্র হিসাবে স্বীকৃত, তা সত্ত্বেও এটি প্রায়শই রেনে এবং দুরাস উভয়ের সৃষ্টি হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। এখানে, পরিচালকই ছবিটির একচ্ছত্র মালিক নন; পরিচালক এবং চিত্রনা ট্য রচয়িতা উভয়েই দায়িত্ব এবং স্বীকৃতি ভাগাভাগি করে নেন। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বিষয় যে, আমরা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ-এর নারী সম্পাদকদের অবদানকে হামেশাই যেমন ভুলে যাই সেই তুলনায় এই চলচ্চিত্রের যুক্ত থাকার সুবাদে একজন নারীর অবদানকে উল্লেখযোগ্যভাবে মনে রাখতে পেরেছি।
এখানে নারী তার যৌন আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন, কাম্য যৌনাচরণকে ভুল বার্তার মাধ্যমে সংকীর্ণ সীমাবদ্ধতায় ঠেলে দেওয়ার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়: গল্পের নায়িকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একদা এক জার্মান পুরুষের প্রেমে পড়েন, তিনিই আবার পরবর্তী সময়ে এক জাপানি পুরুষের প্রেমে পড়েন। এটি সেই সময়ের জাতিগত উত্তেজনা বা নারীদের প্রত্যাশিত মনোভাবের প্রত্যাখ্যান স্বরূপ।
আলোচনার সূত্র ধরেই প্রশ্ন আসে, হিরোশিমা মন আমোর-এ নারী চরিত্রদের (তথা নারীদের) প্রতিনিধিত্বের উপর দুরাসের প্রভাব কতটা ছিল? স্পষ্টতই, বহুলাংশে, হিরোশিমায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থিতির একটি অনস্বীকার্যতা রয়েছে যা দুরাসের অন্যান্য চলচ্চিত্রেও পাওয়া যায়। এখানে নারী তার যৌন আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন, কাম্য যৌনাচরণকে ভুল বার্তার মাধ্যমে সংকীর্ণ সীমাবদ্ধতায় ঠেলে দেওয়ার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়: গল্পের নায়িকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একদা এক জার্মান পুরুষের প্রেমে পড়েন, তিনিই আবার পরবর্তী সময়ে এক জাপানি পুরুষের প্রেমে পড়েন। এটি সেই সময়ের জাতিগত উত্তেজনা বা নারীদের প্রত্যাশিত মনোভাবের প্রত্যাখ্যান স্বরূপ। এই দোলাচলটি তার উপন্যাস, দ্য লাভার (১৯৮৪) এ-ও পাওয়া যায়, যেখানে আমরা এক ককেশীয় নারী এবং এক চীনা পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতার প্রত্যাখ্যানের দৃশ্যসমূহ দেখি। দ্য লাভার ছিল আধা-আত্মজীবনীমূলক, যা ডুরাসের স্ব-ইতিহাসকে পুনর্গঠন করে এবং নারীকে যৌন স্বাধীন সত্তা হিসাবে উপস্থাপন করে, যারা ‘আপন আনন্দের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে চায়’ (স্টেলি এবং এডসন, ২০১০)। এর মানে এই নয় যে দুরাস বা ওই নারী চরিত্রটি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিবলয়ের বাইরে, নিশ্চয় নয়। যৌনতা সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া নারীদের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে দেখানো হয়, আমরা তাকে তার নারী বন্ধুর শরীরের দিকে কামার্ত চোখে তাকাতে দেখি, কিন্তু এই যৌনতা হলো পুরুষের আকাঙ্ক্ষার উপযোগী। যদিও তার মূল উপন্যাসটির বিরুদ্ধে আপত্তি ছিল, দুরাস পরবর্তী সময়ে তার উপন্যাসের চলচ্চিত্র সংস্করণটির প্রতি অস্বীকৃতিও জ্ঞাপন করেছেন, যা মূলত চলচ্চিত্রের আধিপত্যবাদী প্রবণতার প্রকৃত উদ্বেগও প্রদর্শন করে।
ভার্দা এবং দুরাস উভয়ের কাজে, নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রসঙ্গে নারীবাদী প্রভাব লক্ষ্য করা অসম্ভব নয় মোটেও। যৌন স্বাধীনতা বিষয়ক উদ্বেগ এখানে উপস্থিত। সেলিয়ারের মতে, উভয়েই তাদের প্রধান নারী চরিত্রদের স্বীয় সংজ্ঞা ও জটিলতাসমূহ প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। পাশপাশি নারীর যৌনতার অত্যন্ত আধুনিক উপস্থাপনা এবং প্রথাগত চলচ্চিত্রে নারীর যে পৌরাণিক উপস্থাপনা সেটাকে নস্যাৎ করে। দুরাস এবং ভার্দা উভয়ই ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভে তাদের প্রভাবের জন্য স্মরণীয়, এটি এই আন্দোলনের একটি প্রমাণস্বরূপও যে এই নারীদ্বয়কে এমতন কর্তৃত্বও অর্পণ করা হয়েছিল। একইভাবে, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে খোলা-মনের মানসিকতার এবং স্বশিক্ষিত ভার্দাকে অত্যঁর চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করার দিকটি উল্লেখযোগ্য যা চুক্তিমাফিক স্টুডিওভিত্তিক ঠগামোর থেকে খানিকটা বেরিয়ে আসার মতোও।
ভার্দা এবং দুরাস উভয়ের কাজে, নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রসঙ্গে নারীবাদী প্রভাব লক্ষ্য করা অসম্ভব নয় মোটেও। যৌন স্বাধীনতা বিষয়ক উদ্বেগ এখানে উপস্থিত। সেলিয়ারের মতে, উভয়েই তাদের প্রধান নারী চরিত্রদের স্বীয় সংজ্ঞা ও জটিলতাসমূহ প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। পাশপাশি নারীর যৌনতার অত্যন্ত আধুনিক উপস্থাপনা এবং প্রথাগত চলচ্চিত্রে নারীর যে পৌরাণিক উপস্থাপনা সেটাকে নস্যাৎ করে। দুরাস এবং ভার্দা উভয়ই ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভে তাদের প্রভাবের জন্য স্মরণীয়, এটি এই আন্দোলনের একটি প্রমাণস্বরূপও যে এই নারীদ্বয়কে এমতন কর্তৃত্বও অর্পণ করা হয়েছিল। একইভাবে, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে খোলা-মনের মানসিকতার এবং স্বশিক্ষিত ভার্দাকে অত্যঁর চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করার দিকটি উল্লেখযোগ্য যা চুক্তিমাফিক স্টুডিওভিত্তিক ঠগামোর থেকে খানিকটা বেরিয়ে আসার মতোও।
যাই হোক, ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ এখনও নারী আধিকারীকদের অপ্রতুলতা প্রকাশ করে। এ-কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে উল্লেখিত চলচ্চিত্রসমূহকে নারী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আধুনিক বলে মনে করা হয় কারণ উক্ত চলচ্চিত্রসমূহের নির্মাণ প্রক্রিয়ার নারী নির্মাতাদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। ক্যামেরার পিছনে নারী পরিচালকের উপস্থিতি অনুল্লেখ্য, আর ঠিক এই অর্থে, ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ ছিল মূলত পুরুষ সঙ্ঘ। তবুও, নিউ ওয়েভের সকল সৃষ্টিকে মোটা দাগে যৌনতাবাদী হিসাবে খারিজ করা অনুচিতই হবে। বেশ কয়েকজন পুরুষ চলচ্চিত্র নির্মাতা পর্দায় নারীদের উপস্থাপনা ও বস্তুনিষ্ঠতার বিষয়ে প্রকৃত উদ্বেগ প্রদর্শন করেছেন এবং আধুনিক নারীর প্রতিনিধিত্ব রূপায়নের চেষ্টা করেছেন, যেখানে যৌনতায় নারীর মুক্তি এবং স্বাধীনসত্তার প্রকাশ ঘটেছে। একইভাবে, ক্যামেরার পিছনের ভূমিকায় নারীরা এখনও স্ক্রিপ্ট তত্ত্বাবধান বা সম্পাদনা এমতন কাজেই যুক্ত আছেন। সংখ্যাটি ন্যূনতম হলেও তা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ-এর স্বাতন্ত্রতা প্রকাশ করে না, বস্তুত এটি কাল বা সময়ের দায় হিসাবেই আলোচিত। বলাবাহুল্য স্বল্প সংখ্যক নারীই চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছিলেন এবং ভার্দা নিজেই বলেছেন যে নারীরা তাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষমতায় আদতে বিশ্বাস রাখে না! এটি শুধুমাত্র ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্রেরই নয় বরং সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্যকেই নির্দেশ করে। একইভাবে, এটি একটি অসমতা যা আজও চলচ্চিত্র শিল্পের গোটা ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যমান। ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভের মূল সমস্যাটি এর স্বাতন্ত্রতায় নয় বরং চলচ্চিত্র পরিচালককে সমস্ত কৃতিত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে তদানীন্তন নারী সম্পাদকদের ভুলে যেতে পারা ক্ষমতাটিই আসল।