কোন চিত্রকর যখন শুধু তার কাজ দেখানোর জন্য নয়, বরং চিত্রশিল্প সম্পর্কে তার ধ্যানধারণা প্রকাশ করার জন্য জনতার দরবারে এসে উপস্থিত হয়, তখন সে বিবিধ বিপদের সম্মুখীন হয়।

প্রথমত, বহু লোকই যখন ছবিকে সাহিত্যেরই একটা উপাঙ্গ বলে ভাবতে ভালোবাসে, ফলে চায় যে তা চিত্রগত সাধারণ ধারণা নয়, বরং বিশেষত সাহিত্যগত ধারণা প্রকাশ করুক, তখন আমার ভয় হয় যে সাহিত্যিকদের এলাকায় কোন চিত্রকর হানা দেওয়ার উপক্রম করলে তারা ভারি আশ্চর্য হয়ে তাকে দেখবে। বস্তুত, আমি এ-বিষয়ে সচেতন যে একজন চিত্রকরের শ্রেষ্ঠ মুখপাত্র হল তার কাজ।

যদিও সিনা, দেভ্যালিয়ে, দেনি, ব্লঁস, গের‍্যাঁ বা বের্নার-এর মতো শিল্পীরা এইসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন এবং বিভিন্ন সাময়িকপত্রে তা সাদরে গৃহীত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করব লেখার শৈলী নিয়ে বেশি না ভেবে সোজাসরলভাবে একজন চিত্রকর হিসেবে আমার অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষার কথা বিবৃত করতে।

কিন্তু এখন আমি নিজেই নিজের বিরোধিতা করার যে-বিপদ, তার সম্ভাবনা আগাম টের পাচ্ছি। আমার আগেকার কাজ আর এখনকার কাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আমার অনুভূতি খুবই গভীর, কিন্তু এ-নিয়ে আমি গতকাল যা ভেবেছি তার সঙ্গে আমার আজকের ভাবনা হুবহু এক নয়। অথবা বলা যায়, আমার মূলগত ভাবনা বদলায়নি, কিন্তু আমার ভাবনা ইতোমধ্যে বিবর্তিত হয়েছে, এবং আমার অভিব্যক্তির ধরণ তাকে অনুসরণ করেছে। আমার কোন ছবিকেই আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু যদি তা আবারও করার দরকার হয় তো সেইসব ছবির মধ্যে এমন একটাও নেই যা আমি অন্যভাবে করব না। গন্তব্য সর্বদা এক, কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর জন্য আমি নতুন কোন পথের সন্ধান করব।

শেষত, এখানে যদি আমি অমুক শিল্পী বা তমুক শিল্পীর নাম করি তা শুধু এটা দেখানোর জন্য যে কোথায় আমাদের ধরণ আলাদা, কিন্তু তাতে মনে হতে পারে যে আমি বোধ হয় তাঁর কাজকে ছোট করছি। ফলে যে-সমস্ত শিল্পীর লক্ষ্য এবং পরিণাম আমি সবচেয়ে ভালো বুঝি বা যাঁদের সাফল্যের আমি প্রশংসা করি সবচেয়ে বেশি, এভাবে তাঁদের প্রতি অবিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছি আমি, যদিও এখানে তাঁদের কথা উল্লেখ করব শুধু দৃষ্টান্ত হিসেবে, তাঁদের মধ্যে আমার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়, বরং তাঁরা কী করেছেন তার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট করে দেখানোর জন্য যে আমি কী করার চেষ্টা করেছি।

- Advertisement -spot_img

2 মন্তব্য

  • একটি উত্তর ত্যাগ

    Please enter your comment!
    Please enter your name here