সিনেমাটা নিয়ে এবং এর পেছনের মূল মানুষটাকে নিয়ে কৌতুহল লালন করছি অনেকদিন। চিত্রসূত্রের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নেবার কথা যখন তাঁকে জানালাম, তিনি তখন খুব ব্যস্ত IDFA (International Film Festival Amsterdam) নিয়ে। বললেন প্রায় ১০০ মিটিং এটেন্ড করতে হচ্ছে। আমার আগ্রহের কথা শুনে ক’দিন বাদে LoveLoveLove Biennale Beijing 2022 এ দেয়া তাঁর একটা সাক্ষাৎকার পাঠালেন। সেটা ভাষান্তর করবার পর মনে হল অনেকগুলো বিষয় তো এখনো জানা হল না, গলা ভিজেছে, কিন্তু তেষ্টা মেটেনি। অগত্যা গুগল পন্ডিতের দ্বারস্থ হলাম, কিন্তু সমস্ত ম্যাগাজিনগুলোতেই দেখতে পেলাম তাঁকে করা প্রশ্নগুলো প্রায় একই রকম। তাই, ভদ্রলোককে আবার নক করলাম। বললেন, ১৭ই নভেম্বরের পর যোগাযোগ করতে। সবুরে মেওয়া ফললো, পাওয়া গেল তাঁর বেশ কিছু নতুন তথ্য। এখানে LoveLoveLove Biennale Beijing 2022 এ দেয়া সাক্ষাতকারটি এবং চিত্রসূত্রের জন্য সাক্ষাৎকারটি এক সঙ্গে দেয়া হল, তাতে অনেকগুলো ব্যাপার বুঝতে সহজ হবে ।
স্যাক্সোফোনের অদ্ভুত শব্দের সাথে একে একে চিত্রগুলো ভেসে উঠে পর্দায়, প্রথমে ঘনকালো মেঘ ফুঁড়ে আসে সূর্য, এরপর একটা অনন্ত-ধবল আইসব্রেকার ধীরে পেরিয়ে যাওয়া, একটা বিস্তীর্ণ মরুভূমির হাইওয়ে, আর তারপরেই একটা অ্যাপোক্যালিপ্টিক ল্যান্ডস্কেপে বিড়ালের খাদ্যের বিলবোর্ড- এভাবেই তথ্যচিত্রটি শুরু হয়, নাম ‘ইন প্রেইজ অফ নাথিং’।
সিনেমাটির নির্মাতা বরিস মিটিচ একজন সার্বিয়ান চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক যিনি বেলগ্রেডে থাকেন এবং সেটাই তাঁর কর্মস্থল। তাঁর সিনেমা ইন প্রেইজ অফ নথিং (2017), গুডবাই, হাউ আর ইউ? (2009), আনমিক টাইটানিক (2004), এবং প্রিটি ডায়না (2003) নিয়ে প্রায় গোটা বিশ্ব-ভ্রমণ করেছেন এবং ২৫ টি টেলিভিশন নেটওয়ার্কে (ARTE, MDR, RTS-SSR, SVT, YLE, RAI, আল জাজিরা এবং অন্যান্য) উপস্থিত হয়েছেন। ১৫০ টিরও বেশি উৎসবে উপস্থাপিত (আমস্টারডাম, এডিনবার্গ, আবু ধাবি, মন্ট্রিল, সিলভারডকস, মার দেল প্লাটা এবং জেরুজালেম সহ)এবং ২০ টি পুরস্কার অর্জন করেছে (সারাজেভো, মাদ্রিদ, রোম, মেক্সিকো সিটি, মন্টেভিডিও, নভোসিবিরস্ক এবং অন্যান্য)। মিটিচ প্লেবয় এবং ডক্স ম্যাগাজিনের জন্য ব্যঙ্গাত্মক নিবন্ধও লেখেন। তিনি ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকা এবং অনলাইনে ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাণের ‘বাস্তববাদ’শেখান।
সিনেমাটি দেখতে গিয়ে কখনো মনে হয়েছে গ্র্যামী আজীবন সম্মাননা বিজয়ী গায়ক, সুরকার, লিরিসিস্ট এবং অভিনেতা জেমস নিউওয়েল ওস্টেনবার্গ জুনিয়র aka পাঙ্কদের গডফাদার aka ইগি পপ-এর ওরকম ভয়েস ওভার না থাকলে এ-সিনেমা হয়তো এতটা অসাধারণও হয়ে উঠতো না।
খুব জুতসই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছেন ক্যাবারে গ্র্যান্ডমাস্টার প্যাসকেল কমেলেড এবং টাইগার লিলিস। আশি মিনিটের তথ্যচিত্র। ইনিশিয়াল রিলিজ ডেট আট আগস্ট, দুই হাজার সতের। সিনেমার সিনোপসিসে লেখা- ভুল বোঝাবুঝির জীবন থেকে বাঁচতে ‘নাথিং’ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পর্বতমালা এবং সমুদ্র জুড়ে তার পথ তৈরি করে, তার চারপাশের বিষয়ে মন্তব্য করে এবং জীবন, রাজনীতি, মৃত্যু এবং জীবনের অর্থ নিয়ে চিন্তা করে।
চিত্রসূত্রের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নেবার কথা যখন তাঁকে জানালাম, তিনি তখন খুব ব্যস্ত IDFA (International Film Festival Amsterdam) নিয়ে। বললেন প্রায় একশ মিটিং এটেন্ড করতে হচ্ছে। আমার আগ্রহের কথা শুনে ক’দিন বাদে LoveLoveLove Biennale Beijing 2022-এ দেয়া তাঁর একটা সাক্ষাৎকার পাঠালেন। সেটা ভাষান্তর করবার পর মনে হল আরও কিছু জানবার বাকি।
অগত্যা আবার নক করলাম। বললেন, সতের নভেম্বরের পর যোগাযোগ করতে। পাওয়া গেল তাঁর বেশ কিছু নতুন তথ্য। এখানে প্রথমে LoveLoveLove Biennale Beijing 2022-এ দেয়া তাঁর সাক্ষাৎকারটি রইল, পরে নতুন নেয়া সাক্ষাৎকারটি-
এই নাথিং– কে আপনি কেন আপনার সিনেমার মূল চরিত্র হিসেবে বেছে নিলেন? কীভাবে এই বিমূর্ত ধারণাটি আপনাকে মানবীকরণ করতে সাহায্য করেছে?
আমি চেয়েছিলাম নাথিং কথা বলুক, কারণ এর আগে কখনই সে কথা বলেনি। আপাতবিরোধী সত্য এই মতবাদ (প্যারাডক্স)কে স্বীকার করিয়ে নেবার আরেকটি উপায় ছিল নাথিং নিয়ে সিনেমা বানানো- কেবলই এটা করব তা নয়, নাথিং-কে আমি একটা ব্যক্তিত্বও দেব এমনটাই উদ্দেশ্য ছিল। অবশ্যই, এভাবে আমি নাথিং কন্সেপ্টটিকে আরও বেশি ‘নিয়ন্ত্রণমুক্ত’ করতে চেয়েছি। এটা পরিষ্কার যে এই সিনেমাটি হল নাথিং-এর সঙ্গে আমার বোঝাপড়ার, একটি বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনাই কেবল নয়, যা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। কিছুক্ষণের জন্য এই সিনেমার শিরোনাম ছিল ‘আমার নাথিং তোমার নাথিং এর চাইতে বড়।’
সিনেমাটির টাইটেল হল ‘ইন প্রেইজ অফ নাথিং।’ আমরা ‘নাথিং’ এর প্রশংসা কেন করব? সিনেমায় ‘নাথিং’ কে নায়ক বা ঈশ্বর মনে হবার চাইতও অনেক বেশি একটি পুরানো বন্ধুর মতো মনে হয়েছে, যে তার পর্যবেক্ষণ, বোঝাপড়া এবং বিভ্রান্তিগুলি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়। এই শিরোনামে আপনার অনুপ্রেরণা কি?
শিরোনামটি ‘ইন প্রেইজ অফ ফোলি’ ( In Praise of Folly; and Letter to Martin Dorp, 1511, by Desiderius Erasmus ) এর একটি সরাসরি প্যারাফ্রেজ, আমার জীবনের সবচাইতে প্রিয় ব্যঙ্গাত্মক বই, যেটা রটারডাম-এর ইরাসমাস লিখেছিলেন পনেরশ এগার সালে, যেখানে ফোলি অথবা পাগলামি সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ায় এবং সমাজের ভুলগুলো নিয়ে মজা করে। পাঁচশ বছর পর আমার সিনেমায় নাথিং ঠিক এই রোলটিই প্লে করছে। ‘ইন প্রেইজ অফ নাথিং’ এর একটা দ্বৈত অর্থও আছে, একদিকে এর অর্থ ‘চলুন নাথিং এর প্রশংসা করি’, কারণ, নাথিং জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি একটা উপাদান। আবার, অন্যভাবে বলা যায় ‘কোনো কিছুই প্রশংসাযোগ্য নয়।’ সুতরাং, এটা জীবনের প্রতি আরও নম্র দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানায়।
আপনি আপনার জীবনে নাথিংকে কীভাবে দেখেন? আপনি কী মনে করেন জীবনের জন্য নাথিংনেস অনিবার্য?
এই সিনেমাটি তৈরির আগ পর্যন্ত আমি নাথিং-কে নিয়ে বিশেষভাবে তেমন ভাবিনি এবং আমি মনে করি না যে খুব বেশি কেউ এটি করেছে, যা দুঃখজনক। কারণ যে-কোন কিছুর আরও ভাল মূল্যায়ন করবার জন্য নাথিং একটি দুর্দান্ত ফিল্টার এবং খুব আকর্ষণীয় কোন চিন্তা উস্কে দিতে একটি চমৎকার অনুঘটক । আমি মনে করি শূন্যতা অনিবার্য, কিন্তু একটি ভাল উপায়ে— এটি এতটাই শক্তিশালী এবং সবকিছুর জন্য এতটাই অবিশ্বাস্য যে এর সচেতনতা আমাদের জীবনের প্রতিটি ছোট জিনিসকে আরও অনেক বেশি উপলব্ধি করায়।
দর্শকরা এই সিনেমাটি কেমন উপভোগ করবেন বলে আশা করছেন? এটি থেকে দর্শকরা কী বার্তা এবং অভিজ্ঞতা পাবেন বলে আশা করছেন?
আমার খুব ভাল লাগবে যদি দর্শকরা এই উস্কানিটিকে একটি খেলা হিসেবে নেয়। তাঁরা সিনেমাটি দেখবার সময় খেলবে এবং শেষে ‘নাথিং’কে তাঁদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রসেস করবে। আমার মনে হয় যে-সিনেমাটি উপলব্ধিগতভাবে এবং বুদ্ধিগতভাবে খুব চাহিদাপূর্ণ, সেটি সীমাহীন পরিমাণে বারবার দেখা যেতে পারে, এবং আমি নাথিং-এর স্ক্রিপ্ট গীতিনাট্যের মতন প্রকাশ করেছি, যেখানে আপনি প্রতিটি লাইন পড়তে এবং প্রক্রিয়াগত করতে পারবেন। স্ক্রিনিং-এর পরে আমি আসলে ইতিবাচক সান্ত্বনার অনুভূতি দ্বারা বিস্মিত হয়েছিলাম, প্রায় একটি যৌথ পরিশোধিত অভিজ্ঞতার মতন। এই কারণেই আমি পোস্টারের লগলাইনটিকে পরিবর্তন করে লিখেছি— ‘একটি অসম্ভাব্য ভাল লাগার তথ্যচিত্র।’
আমরা জেনেছি যে ছবিটি বাষট্টি জন সিনেমাটোগ্রাফার শ্যুট করেছে। এই এতগুলো সিনেমাটোগ্রাফার যারা কীনা ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি এবং অভিজ্ঞতা লালন করে, এদের সবার নাথিং–কে বুঝবার এবং ঐক্যমতে পৌঁছুবার ব্যাপারটাতো খুব কঠিন হবার কথা। লেখক এবং পরিচালক হিসেবে, এই বিশাল দলের সাথে কাজ করবার গোপন রহস্য কী?
আমি জানতাম যে আমিই ‘নাথিং’-এর বর্ণনা লিখব, কিন্তু আমি এমন একজন হতে চাইনি যে নাথিং-এর চিত্ররূপ দেবে। তাই আমি সাত জায়গা থেকে সাত জন বিশিষ্ট সিনেমাটোগ্রাফারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমি আসলেই ব্লাফ করেছিলাম এবং একইসাথে তাদের সবাইকে দেখিয়েছিলাম যে বাকি ছয় জন কে হবে এবং তারা সবাই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই দেখা গেল যে তাঁরা বিভ্রান্ত বোধ করেছে এবং এমনকী তাঁরা যে স্বাধীনতা এবং দায়িত্ব পেয়েছে তাতে কিছুটা ভয়ও পেয়েছে। তাই আমি আরও অনেক কম বিখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফারকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যারা এই খেলাটি খেলতে ইচ্ছুক এবং যারা একে অপরের থেকে আলাদা। আমরা একটি বেনামী অনলাইন ব্রেনস্টর্মিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একসাথে কাজ করেছিলাম যেটি আমার কাজিন প্রোগ্রাম করেছিল, যার ভিত্তিতে তারা একে অপরের ফুটেজ দেখতে এবং মন্তব্য করতে পারছিল, কিন্তু কে কি ছবি করেছে, বা কে কি বলেছে তা কেউ জানতো না। আমি আলাদাভাবে সিনেমাটোগ্রাফারদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছি এবং প্রত্যেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থেকে সরাসরি নির্দেশাবলী পর্যন্ত কন্ট্রিবিউশানের পাঁচটি ধাপের মধ্য দিয়ে গেছে। তাই এটি ছিল একটি চমৎকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যা সম্ভব হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সহজ অভিযোজন এবং শুরু করার জন্য একটি অনুপ্রেরণাদায়ক প্ররোচনা দিয়ে।
সত্তরটি দেশে আট বছরের শুটিং, আপনার এবং টিমের বাকীদের অবশ্যই সমস্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশকে ধারণ করবার একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়েছে, আপনি এই যাত্রা সম্পর্কে কিছু শেয়ার করতে পারেন?
অবাক বিষয় হল এই সিনেমাটির ধারণা আমার ছোট্ট মাথায় শুরু হয়ে এতটা বৈশ্বিক হয়ে উঠেছে, কিছুটা বাস্তবের নাথিং- এর মতন। আবার অন্যদিকে, মানচিত্রে চোখ রেখে আমি নিজেকে কখনো প্রশ্ন করেছি, পৃথিবীর এই অংশটার ব্যাপারটা কি? ওখানকার একজন সিনেমাটোগ্রাফার খোঁজা যাক। এবং ফুটেজগুলো আসবার পরে ছোট বাচ্চা খেলনা খুলে যেমন উত্তেজিত হয়, তেমন ছিলাম। আমি খারাপ ফুটেজগুলোরও প্রশংসা করেছি, কারণ সেগুলো আমায় দেখিয়েছিল আমাদের কী করা উচিৎ নয়। আবার কখনো খুব ভয়ের ব্যাপার ছিল যে একটা দুর্দান্ত শট খুব ছোট্ট হল।
আমি নিজেও প্রায় ৩০ টি দেশে চিত্রগ্রহণ করেছি, বছরের পর বছর যেখানে গেছি, যা দেখেছি আমার মাথার একটা অংশ তার ভেতর সবকিছু থেকে নাথিং কে প্রসেস করবার প্রক্রিয়া করছিল। কখনও কখনও চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সুস্পষ্ট জিনিসগুলি আসলে খুব সুস্পষ্ট, খুব সহজ ছিল। বিশেষ করে যখন আমি বর্ণনা এবং সঙ্গীত এতে আরোপ করি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই এই ভেবে যে আমি কখনই ‘দ্বিতীয় সারির’ ফুটেজ মুছে ফেলিনি, যেগুলো আসলে সুপিরিওরগুলোর চাইতে চলচ্চিত্রে অনেক ভালো কাজ করেছে।
আচ্ছা কাহিনির পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, হ্যাঁ এরা অন্তহীন ছিল। আমরা যে অঞ্চলটি কভার করেছি, তার পরিধি দেখাবার জন্য সবচাইতে ইঙ্গিতপূর্ণ ছিল একদিন যখন আমি আর্কটিক সার্কেলের উত্তরে মুরমানস্কে (Murmansk) একটি তুষারঝড়ে একজন রাশিয়ান ডিওপি এবং দক্ষিণ প্যাটাগোনিয়ার (southern Patagonia) পুন্তা অ্যারেনাসে (Punta Arenas) জলের নিচের সিনেমাটোগ্রাফার দম্পতিকে একই সাথে নির্দেশ দিয়েছিলাম। আমি সত্যিই অনুভব করেছি যে বিশ্বের কেন্দ্রে ছিলাম।
‘নাথিং’এর পর্যবেক্ষণ এবং মতামতগুলি দার্শনিক অনুপ্রেরণায় পূর্ণ যা একাধিক ক্ষেত্রের জ্ঞান এবং বোধ ধারণ করে। আপনি কি আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন কীভাবে আপনি এই ছবিটি তৈরি করেছেন? আপনি কি অনেক গবেষণা করেছেন, নাকি আপনি শুধু চিন্তাগুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছেন?
এই সিনেমাটির গ্রন্থপঞ্জি দ্রুতগতিতে বাড়ছিল, প্রতিটি বই এবং প্রতিটি নিবন্ধ কমপক্ষে আরও পাঁচটি নিবন্ধ খুলবে। নতুন বোধ-এর মাধ্যমে ‘নাথিং’কে পুনর্ব্যাখ্যা করাটা খুব আকর্ষণীয় ছিল। চিত্রগ্রহণ এবং চিত্র সংগ্রহের পাশাপাশি আমি যা পড়ছি তার সম্পর্কে সমস্ত ধরণের চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলিও লিখেছিলাম। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটা চলেছিল। স্ক্রিপ্টরাইটিং ডেডলাইনকে ধন্যবাদ দেব, কারণ তখন আমার টেবিল এবং মাথা পরিষ্কার করতে হচ্ছিল এবং স্ক্রিপ্টটাই লিখতে হচ্ছিল। নিজেই বিস্মিত হয়েছি যে আমি এটা একবারেই লিখেছিলাম। অবাক ব্যাপার হল, আমি সবই লিখেছিলাম কবিতার ছন্দে, যা আমি জীবনে কখনও চেষ্টা করিনি এবং যা এই চলচ্চিত্রের জন্য কখনও পরিকল্পনা করিনি। আ লা পুশকিন (à la Pushkin), সাইরানো ডি বার্জারেক (Cyrano de Bergerac) বা ডাঃ সিউস ( Dr. Seus)। এই অদ্ভুত, সহজ কিন্তু কার্যকরি ফর্মটি পাবার পরে সবকিছু কীভাবে একত্রিত হয়েছিল তা আশ্চর্যজনক। কিন্তু এত বেশি চিন্তা না করলে এটা সম্ভব হতো না।
সিনেমাটি নাথিং এর রেফারেন্সে পূর্ণ, হ্যাঁ, শিল্প থেকে বিজ্ঞান এবং দর্শন থেকে জনপ্রিয় সংস্কৃতি— আমি আধপৃষ্ঠার ব্যাখ্যা সহ চলচ্চিত্রের প্রতিটি লাইন-এর টিকা দিতে পারি। দর্শকদের এর সমস্তটাই ধরার দরকার নেই, ফিল্মের সাথে সংযুক্ত বোধ করার জন্য শুধুমাত্র কয়েকটিই যথেষ্ট। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা রেফারেন্সকে চিনতে পারে, এবং এটাই এই ফিল্মটির পাঠকে এত সার্বজনীন এবং এত বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
এই ফিল্মের অন্যতম হাইলাইট হল ইগি পপ–এর অনন্য সুন্দর কণ্ঠে নাথিং এর বর্ননা। কেন আপনি ইগি পপকে নির্বাচিত করলেন? তাঁর কন্ঠস্বর কি নাথিং এর মর্মকে সমৃদ্ধ করে? এবং কীভাবে এটা সিনেমাটিকে সহযোগিতা করেছে?
আমি সবসময় জানতাম যে বর্ণনার জন্য আমার একটি বিশেষ কণ্ঠস্বর লাগবে, কিন্তু আমি বছরের পর বছর জানতাম না যে এটি কার হবে। ভেবেছিলাম আমি যে-কাউকে, এমনকী সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছেও যেতে পারি এবং নাথিং-এ তাঁদের ভয়েস দিতে বলতে পারি, ভেবেছিলাম তারা অন্তত এটি বিবেচনা করবে। তারপর একদিন, আমার ভাই আমাকে ইগি পপ-এর একটি ভিডিও ক্লিপ পাঠালো, যেখানে ইগি ফরাসি ভাষায় জ্যাক ব্রেল ( বেলজিয়ান গায়ক ) এর গান গাইছে, এবং আমি ভাবলাম, বাহ, ইগি এত প্রবীণ হয়েও তাঁর সমস্ত ক্যারিশমা এবং শক্তি এবং বুদ্ধি এবং স্থিতিস্থাপকতা বজায় রেখেছে এবং আমি ধারা বর্ণনার জন্য আর অন্য কাউকে কেন খুঁজব? ইগি নাথিং-এর সমস্ত চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলোকে মূর্ত করেছে যা আমি বছরের পর বছর ধরে ভেবেছিলাম, এবং সে আমার নিজের সংগীত লালন-পালনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আমি কিছু জিপসি জাদুর কৌশলও বের করেছিলাম, কিছুটা ভাগ্যও সহায় ছিল, তিনি সম্মত হয়েছিলেন। সুতরাং এখন এটি শুধুমাত্র নাথিং সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্রই নয়, ইগি পপ দ্বারা বর্ণিত নাথিং সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র।
আমরা লক্ষ করেছি যে আপনি শিক্ষাদান এবং বক্তৃতার ক্ষেত্রেও সক্রিয়। কী আপনাকে এটি করতে অনুপ্রাণিত করে? তরুণ নির্মাতাদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
আমি আমার চিন্তা সংগঠিত করার জন্য শেখাই, এটি তখনই সুন্দর হয় যখন কেউ আপনাকে আগ্রহী আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের সাথে আপনার সিদ্ধান্তগুলি শেয়ার করবার জন্য পয়সা দেয়, শেখানোর এই সুযোগের জন্য আমি সবসময়ই বিনীত থাকি। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে সমস্ত চলচ্চিত্র নির্মাণই নকলের পরিবর্তে মৌলিক হওয়া উচিত, এবং সমস্ত চলচ্চিত্র বক্তৃতাও। এই কারণেই আমার সমস্ত বক্তৃতা মৌলিক এবং সেই কারণেই আমি খাঁটি চলচ্চিত্র লেখকদের পছন্দ করি। আমি এমন একটি ফিল্ম দেখতে চাই যা গতানুগতিক উপায়ে দুর্দান্ত একটি চলচ্চিত্রের চেয়ে নতুন উপায়ে খারাপ।
আপনি কি ভালবাসা শব্দটি সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি বর্ণনা করতে পারেন?
আমার ক্ষেত্রে, ভালবাসা হল সীমালঙ্ঘন, আনুগত্য, আপোস, ত্যাগ, নিরাপত্তা এর দৈনিক পরিবর্তনশীল সমীকরণ।
যদি সম্ভব হয়, আপনি কি আমাদের আপনার ভালবাসার অবিস্মরণীয় মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি বলতে পারেন?
এই সাক্ষাৎকারের উত্তর দেয়াটা আমি খুব উপভোগ করেছি (হাসির ইমো)।
[এবার পড়া যাক চিত্রসূত্রকে দেয়া তাঁর সাম্প্রতিক (২২ নভেম্বর, ২০২২)- এর সাক্ষাৎকারটি]
নাথিং এর বাংলা অর্থ হল অনেকটা নো থিং (no thing) এর মতন, কেমন যেন ক্লিশে! আবার আমি যদি নাথিংকে বলি শূন্য, তখন আমি একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারি। মানে শূন্যের মজাইতো এটা যে এর আগে কিংবা পরে দাঁড়িয়ে গিয়ে কিছু একটা তৈরি করতে পারা। আমি জানি না আপনি আদতে কীভাবে ভাবেন। আপনি নাথিংকে কীভাবে ভাবেন, নো থিং নাকি শূন্য, নাকি এর কোনটাই না?
এখন আমি নাথিংকে বন্ধুত্বপূর্ণ দেবদূত হিসাবে ভাবি, যা সবকিছুকে সঠিক দৃষ্টিকোণে রাখার জন্য রয়েছে। আমি যেভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছি তা হল একই সাথে এটিকে আমার অসীম সম্ভাবনার ক্যানভাস হওয়ার অনুমতি দিয়েছি, এবং এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমার সবকিছু মেনে নেয়া উচিত নয়, বা খুব বেশি গুরুত্ব সহকারে নেওয়াও উচিত নয়।
আপনাদের তো প্রচুর ফুটেজ ছিল, এবং অনেক ভাল ফুটেজকে বাদ দেয়াটাও খুব কঠিন সিদ্ধান্ত , কাজটার শেষে কখনো কি আপনার কোন ফুটেজের জন্য আফসোস হয়েছে?
আমি আসলে এই খেলাটি চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম বিস্তৃত দর্শকদের কাছে ফুটেজগুলো মেলে দিয়ে, যাতে করে যে কেউ ‘নাথিং’-কে নিয়ে তাদের নিজস্ব শটগুলো কন্ট্রিবিউট করতে পারে, কী ওয়ার্ডের মাধ্যমে নাথিং-এর ফুটেজ খুঁজতে পারে এবং মতামত জানাতে পারে। নাথিং-এর এক ধরনের মিউজিয়াম আর কি। এটি কোনও দিন অনলাইনে বা কোনও শান্ত বাস্তবিক জায়গায় ঘটতে পারে। কিন্তু না, আমি কখনোই কোনো শট যুক্ত না করবার জন্য আফসোস করিনি, কারণ সেখানে নাথিং-এর অসীম সরবরাহ রয়েছে, এবং কোনো শট ব্যবহার না করার জন্যও আমি দুঃখিত নই, কারণ তারা সকলেই গল্পের ধারণা এবং চলচ্চিত্রের ভিজ্যুয়াল শৈলিকে আরও পরিষ্কার করার জন্য তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করেছে।
যে কোনো ঘটনাকে আপনি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন সেটাই আসল, এবং এই কৌণিক ব্যাপারটা সেই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক দেখায়। আপনাকে বলতে শুনেছি এই ডকুমেন্টারির দ্বিতীয় ভার্বটা আপনি মনে করেন রিটোরিসাইজ (rhetoricize)। আপনি কি মনে করেন যে সমস্ত ঘটনার রিটোরিসাইজ এর সুযোগ আছে?
আমি চাইনি নাথিং বাকরুদ্ধ হোক, ইম্প্রেশনিস্ট হোক, কোয়ানিস্কাতসি (Koyanisqaatsi, 1982) বা বারাকা (Baraka, 1992)-র মতো। আমাদের এ-ধরনের সিনেমা অনেক ছিল। তারা সিনেমার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আমি মনে করি এখন একটু বেশি সুনির্দিষ্ট বক্তৃতা যোগ করার জায়গা আছে। আমি এই বিশেষ ফিল্টারের মাধ্যমে বিশ্ব সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করার জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে নাথিং-কে ব্যবহার করেছি। সুতরাং এটি আমার ‘নাথিং’, নাথিং-এর একটি উদ্দেশ্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, যেটা কীনা যে কোনোভাবেই অসম্ভব ছিল। এমনকি আগেও বলেছি কিছু সময়ের জন্য এই সিনেমার কাজের শিরোনাম ছিল, ‘আমার নাথিং তোমার নাথিং এর চাইতে বড়।’ হ্যাঁ, আমি অলঙ্করণ করি, উত্তর দেবার চাইতেও বেশি প্রশ্নগুলোকে আরেকটু উন্মুক্ত করবার জন্য।
আপনার সিনেমাটা তো তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে, এবং আমরা জেনেছি যে এর পেছনে আপনার পাহাড়সম পরিশ্রম আছে, কেবল যদি বিবলিওগ্রাফির কথাটাই বলি, সেটাও বিশাল একটা কর্মযজ্ঞ। প্রশ্ন হল, আদতে আপনি কি কনফিডেন্ট ছিলেন যে এই শ্রম একদিন সার্থক হবে, নাকি আপনি কেবল মনোযোগ দিয়ে আপনার কাজটাই করতে চেয়েছিলেন? মৌলিক কিছু করবার এই ঝুঁকিটা খুব বেশি, তাই না?
আমি জানতাম যে এ-ধরনের একটা উদ্ধত উস্কানি দিয়ে শেষমেশ আমায় প্রমাণ করতে হবে যে আমি প্রচুর পরিমাণে কাজ করেছি। যাই হোক, কাজটা আসলে এতটাই আনন্দের ছিল যে এটা শেষ হবার পর আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, এটি তার অসীম সম্ভাবনার ভেতর ভীতিকর, তবে আমি বিশ্বাস করি যে সত্যিকারের শৈল্পিক সৃষ্টির জন্য অবশ্যই একজনকে তার নিজের অবিশ্বাসকে সরাতে হবে, তারপর একটা দীর্ঘস্থায়ী বোধের মধ্যে প্রবেশ করে সংশয়ের যৌক্তিক স্তরটিকে স্ট্যান্ডবাই রাখতে হবে। একে পাগলামি বা আত্মবিশ্বাস কিংবা বলয় যা-ই বলেন না কেন, যতক্ষণ এটি আছে, জানবেন আপনি সঠিক পথে আছেন।
জব ইন্টারভিউর ক্লিপটিতে আপনি খুব মোলায়েম একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করেছেন, একজন দর্শক হিসেবে আমার মনে হয়েছে আরে এই এপিসোডটা কি ভয়াবহ! চাকরি পেতে হলে প্রায় সুপারম্যান বা সুপারওম্যান হতে হবে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় আমরা যে রূঢ় বাস্তবতার সম্মুখিন হয়ে আছি, এবং যে–জীবন আমরা যাপন করছি, যে ইঁদুর–বিড়াল প্রতিযোগিতায় আমরা লিপ্ত হয়েছি, তার প্রতিফলন। আমি বলছি না, যে এখানে যে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরটা আপনি ব্যবহার করেছেন সেটা খাপ খায়নি, যথেষ্ট ভাল হয়েছে, কিন্তু সাধারণ একজন দর্শক হিসেবে আমার প্রশ্ন হল, এই সফ্ট ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কেন?
জব ইন্টারভিউর দ্রুত লয়ের প্যারোডির কাউন্টার পয়েন্ট হিসেবে এই অংশে জাইলোফোন লুলাবি গানটি কাজ করে, এবং এর সরলতা ও পুনরাবৃত্তির ভেতর দিয়ে একে ফ্রেমও করা যায়। আমি নিজেও ভাবি না যে এটা সিনেমার বেস্ট মিউজিক্যাল পার্ট, কিন্তু এটা চলে আরকি।
ন্যারেশান নির্ভর ডকুমেন্টারি ফিল্মে আমার মনে হয় সঠিক ন্যারেটর খুঁজে পাওয়াটা সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং। ইগি পপ আমার দৃষ্টিতে আপনার দুর্দান্ত নির্বাচন। আমি তাঁকে প্রথম শুনি তাঁর গান ‘প্যাসেঞ্জার’-এ। এই গানটার সূচনালগ্নে তিনি প্রথম–পুরুষে গাইছিলেন, দেখা গেল শেষদিকে তৃতীয় পুরুষে গাইছেন, খুবই অদ্ভুত। এবং আপনার সিনেমার মতন, যেখানে নাথিং একটি কারেক্টার। এই যে প্রচলিত ট্র্যাক থেকে সরে এসে একদম অন্য একটা দিক থেকে আপনারা ভাবেন, একটা নতুন রাস্তা তৈরি করেন— এটা কীভাবে?
সিনেমা বানানো, কথা বলা বা লেখা, পড়ানো কিংবা বাচ্চা মানুষ করা এসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান, গতানুগতিক পদ্ধতিতে চলবার আমার কাছে কোনো মানে হয় না। দক্ষিণ সার্বিয়ায় আমার শহরে হাই স্কুলের সহপাঠীদের উদ্ভট হাস্যরসের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে অভিবাদন জানাই, এবং আমার বক্তৃতায় ব্যবহৃত শব্দ নিয়ে খেলায়, চিত্রাঙ্কন থেকে শুরু করে আমার বাচ্চাদের জন্য উদ্ভাবিত গেমগুলিতে পর্যন্ত আমি সবসময় নতুন সৃজনশীল কিছু করবার চেষ্টা করেছি। এই মানসিক অনুশীলন চালু রেখেছি সৃজনশীল কিছু করবার জন্য। আমি জানি অনেকের জন্যই এটা ভীতিকর ব্যাপার হবে, কিন্তু এটাই আমার জীবনকে অর্থবহ করে তুলে।
একটা সাক্ষাৎকারে দেখতে পেলাম আপনি বলছেন, ইগি পপ একজন পারফেক্ট এন্টি হিরো এবং ছোটবেলার আইকন। বরিস কি তাঁর জীবনে ইগি পপের মতোন হতে চেয়েছিল কখনো?
না, ইগি একজন আইকনিক ক্ষয়ে যাওয়া প্রাক্তন-ইয়াঙ্কি, যিনি খুব এভারেজ গীতিকার। কিন্তু তাঁর প্রতিভা, তেজ, সহনশীলতাকে আমি সত্যিই প্রশংসা করি। এবং সে খুব জ্ঞানী একজন মানুষ। সে যেভাবে পরিণত হয়েছে সেটাকে আমি ভালবাসি এবং আমি আনন্দিত যে অবশেষে তিনি রক’এন’রোল-এর ইতিহাসে তাঁর প্রভাবের জন্য প্রাপ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন। আমার আদর্শ ন্যারেটর সম্পর্কে আমি যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় ভেবেছিলাম, সেগুলি তাঁর সাথে খুব সহজভাবে মেলে, এবং আমি ভেবেছিলাম যে নাথিং নিয়ে একটি সিনেমা তৈরির চেষ্টা করবার এই অসম্ভব খেলায় আমার ছোটবেলার মিউজিক আইডলকে ন্যারেট করতে বলবার মতন আরেকটি অসম্ভব ব্যাপার কেন চেষ্টা করব না।
আপনার শিশুদেরকে নিয়ে পরবর্তী কাজের কথা কোনো একটা সাক্ষাৎকারে শুনতে পেয়েছি, সে কাজের অগ্রগতি কেমন? এবং এটা দর্শকরা কখন আশা করতে পারে যে দেখতে পাবে?
‘ইন প্রেজ অফ নাথিং’ ছিল ‘নাথিং’ নিয়ে একটি চলচ্চিত্র, যা আসলে ‘সবকিছু’ নিয়ে একটি চলচ্চিত্র। পরেরটি ‘সবকিছু’ নিয়ে হবে, কিন্তু আসলে ‘নাথিং’। সারসংক্ষেপ এই রকম:
‘এখন কি এবং তারপরে কি?’ এটা হল একটা সহজ গতানুগতিকতার বিপরীতে লিরিক্স, প্রো-অ্যাকটিভ প্যারেন্টিং, সন্তানদের প্রতি পিতার স্ব-বিদ্রূপাত্মক ভালবাসার চিঠির আকারে, তাদের ভবিষ্যত জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের পড়া, এবং তাদের ছোট, সাধারণ অ্যাপার্টমেন্ট এক শটে ধারণ করা, যেখানে প্রতিটি বিবরণ এক একটি রূপক পাঞ্চলাইনের অনুঘটক হয়ে ওঠে এবং প্রতিটি সারফেস এক একটি মোহনীয় বিচ্যুত ক্যানভাস— যেখানে আ লা ক্রিস মার্কার (ক্রিস মার্কার একজন ফরাসি লেখক, ফটোগ্রাফার, ডকুমেন্টারি ফিল্ম ডিরেক্টর, মাল্টিমিডিয়া শিল্পী এবং চলচ্চিত্র প্রবন্ধকার ছিলেন। La Jetée 1962 তার সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র)-এর এলিস ইন দ্যা ওয়ান্ডারল্যান্ডের সঙ্গে দেখা হয়। এ ব্যাপারে Sans Soleil (1983) এর রেফারেন্স টানা যেতে পারে।
এটা মূলত আমার বাচ্চাদের শৈশবের থেকে আমার বিদায়। আমি জানি যে আমি এটি শেষ করার পরে তারা বাসা ছেড়ে যেতে প্রস্তুত হবে, তাই আমি আমার সময় নিচ্ছি।
বরিস, আপনার ‘ইন প্রেইজ অফ নাথিং’ এর পরে নিশ্চয়ই সারা বিশ্বে অনেক ফ্যান ফলোয়ার তৈরি হয়েছে, আমি আমাদের দেশেই আপনার অনেক অনুরাগী পেয়েছি, যারা আপনার কাজকে শ্রদ্ধা করে, এটা আপনার কাছে কেমন লাগে? এবং আমি আরও জানতে চাই আপনার কি কোনো আইকন ছিল যার কাজ আপনাকে ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার হতে উদ্বুদ্ধ করেছে?
আমার কোনো ডকুমেন্টারির আইডল নেই, আমি সিনেমাটিক ভাষার মাধ্যমে বাস্তব গল্প বলতে পারার বিলাসিতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি, সেইসাথে আমার দেখা সিনেমার কোনো দুর্দান্ত বা ভয়ঙ্কর নির্বিশেষে এমন অসংখ্য দৃশ্য, কৌশল এবং চরিত্রগুলি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি। কখনো কখনো পাল্টা উদাহরণ একটা ভাল নিদর্শনের চাইতেও ভাল।
অনুরাগীদের ব্যাপারে, আমার জানা নাই। আমি মনে করি এই চলচ্চিত্রটি সিনেমা দর্শকদের একটি খুব ছোট অংশের জন্য সত্যিই ভাল কাজ করে যারা চিন্তা-প্ররোচনামূলক সৃজনশীল ডকুমেন্টারি পছন্দ করে, কিন্তু যেহেতু এর দর্শক এতটাই বিশ্বব্যাপী, তাই সংখ্যাগুলি বাড়ে। এটা উপলব্ধি করাও বিস্ময়কর যে আমার খেলাটির সার্বজনীন সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি সাধারণ দর্শক এবং ভিআইপি উভয় দিকের কিছু লোককে খুব তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছে।
বাংলাদেশে ডকুমেন্টারি ফিল্মের জন্য ফান্ডিং প্রায় হয় না বললেই চলে। ফলত, বিদেশি ফান্ডিং এর জন্য নানান চেষ্টা করতে হয়। অনেকটা মডার্ন ডেইজের স্টার্ট–আপ বিজনেস কন্সেপ্টের মতন। হ্যাঁ, এটা চ্যালেঞ্জিং বটে, এতে প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু একটা শঙ্কা কী হয় না যে দূরের ফান্ডিং অর্গানাইজেশানকে বা ব্যক্তিকে লোকাল বিষয়গুলো (যেটা বেশী গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ) ঠিকঠাক বুঝানো গেল না।
আপনি তো বাংলাদেশে এসেছেন, এদেশের সংস্কৃতির সাথে আপনার পরিচয় ঘটেছে, সেই প্রেক্ষিতে আপনার কাছে জানতে চাইছি।
স্থানীয় বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি সমিতি গঠনের জন্য যৌথভাবে, ধৈর্যের সাথে এবং গঠনমূলকভাবে লড়াই করতে হবে, তারপর রাজনীতিবিদদের বোঝাতে হবে যে অল্প পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেশের জন্য অনেক ভালো জনসংযোগ তৈরি করতে পারে। ১৫ বছর ধরে সার্বিয়াতে আমাদের কোনো তহবিল ছিল না, কিন্তু বছরের পর বছর লবিং, তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং সক্রিয় আলোচনার পর, আমরা ধীরে ধীরে একটি নিয়মিত সমবেত ফান্ডিং স্কিম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছ থেকে কিছু নৈপুণ্য শিখুন, বিশেষ করে সৃজনশীল, তবে আপনার গল্পগুলি নিজেই বলুন। আপনি যত ভাল করবেন, সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়কে অনুদান দেওয়া শুরু করতে রাজি করানো তত সহজ হবে। তবে দয়া করে পশ্চিমা চলচ্চিত্র এমনকী গল্প বলার শৈলিও অনুকরণ করবেন না।
শেষ প্রশ্ন, আপনি একটা দীর্ঘ সময় নাথিং–এর সাথে ছিলেন আপনি তাকে একটা চরিত্র দিতে চেয়েছেন, এবং ‘নাথিং’ নিজেকে এক্সপ্রেস করেছে পর্দায়। কাজটা শেষ হবার পর ইদানিং আপনার কি মনে হয় আরও কিছু বলবার ছিল, যেটা বলা হয়ে ওঠেনি?
লিপিবদ্ধ, মিক্সড এবং স্ক্রিপ্টে ঢুকে গেলে পরে এটিকে আসলে নানান কারিগরি উপায়ে আর সম্প্রসারণ করা যায় না। এভাবে ভাবলে, আমি আসলে কখনোই আর কিছু যোগ করতে চাইনি, অথবা এমনও কিছু হয়নি যে আমার মনে হলো আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাদ দিয়েছি। এবং আমি প্রায়ই নিত্যদিনের পাঞ্চলাইন ভাষ্য হিসেবে সিনেমাটির লাইনগুলো আউড়াই, আমার বাচ্চারাও তা-ই করে। তো আমার মনে হয়, গত পাঁচ বছরে বিশ্ব কত বদলেছে, তবু সিনেমাটা এখনো নবীন এবং প্রাসঙ্গিক আছে, এটা একটা ভাল লক্ষণ।