- ছবি তোলার ভঙ্গিমায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বাম হাত হারানো আহত গার্মেন্টস শ্রমিক মরিয়ম।
- রানা প্লাজা ধ্বসের সময় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে পা হারিয়ে বেঁচে ফেরা আরতি তার কৃত্রিম পা ধরে আছে।
- রানা প্লাজা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শিল্পী’র চুল আঁচড়ে দিচ্ছে কন্যাা আইনুর।
- রেবেকা এবং তার স্বামী মুস্তাফিজ। রেবেকা রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুটি পা-ই হারিয়েছে, তাকে শল্য: চিকিৎসকের ছুরি-কাঁচির তলায় যেতে হয়েছে আটবার।
- ধ্বসের পর ধ্বংসস্তূপের অদূরে দাঁড়িয়ে আছে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা রেহেনা।
- হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ক্যা ন্সার আক্রান্ত আন্না, তার জখম হওয়া একটি পা কেটে ফেলতে হবে।
- মাথায় ও কানে গুরুতর আহত হওয়া আছিয়া। সে বর্তমানে বেকার, ফলে সংসার চালানোটাই এখন তার সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ।
- বকেয়া বেতনের আশায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া গার্মেন্টস শ্রমিক ভগবতী।
- নিজের তৈরিকৃত একটি ভাস্কর্য হাতে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকার গার্মেন্টস শ্রমিক শিল্পী।
- রানা প্লাজা ধ্বসে বাম হাত হারানো মরিয়ম বেগম সদ্যপ লাগানো কৃত্রিম হাতটি নাড়িয়ে দেখছে।
- বেঁচে যাওয়া গার্মেন্টস শ্রমিক মিলি। বর্তমানে আরেকটি কারখানায় কাজ করছে।
- হাসপাতাল করিডোরে স্ক্র্যা চে ভর দিয়ে হাঁটছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত সোনিয়া।
- উভয় পা হারানো পাখির এখন হুইলচেয়ারেই ভরসা।
- ছয়মাস বয়সী সন্তানের সঙ্গে খেলায় ব্যেস্ত রিক্তা। রানা প্লাজা ধ্বসের সময় ধ্বংসস্তূপে আটকে পরে ডান হাত হারিয়েছে রিক্তা।
- বাবা-মা’র ছবির সামনে দাঁড়ানো মুক্তা। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মুক্তা তার মা শিরিনকে চিরতরে হারিয়েছে।
- বেঁচে যাওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকরা বর্তমানে আরেকটি কারখানায় কাজ করছে।
- রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়ে বেঁচে ফেরা মানসিকভাবে দারুণ আঘাতপ্রাপ্ত আলেয়া।
- রানা প্লাজা দুর্ঘটনার অব্যলবহিত পরে ধ্বংসস্তূপের পাশে ওই ভবনের কোনো একটি গার্মেন্টস কারখানার একটি দুমড়ানো শার্ট।
- ধ্বংসপ্রাপ্ত রানা প্লাজার বর্তমান ফাঁকা জায়গাটিতে জমে থাকা পানিতে কেউ একজন মাছ চাষ করেছে।
‘আমি যদি ওই ধসের মধ্যে পড়ে মরে যেতাম তাহলেই ভালো হতো; আমি আর ব্যথা সহ্য করতে পারছি না,’ সেই দিনটির জন্য রেবেকা এখন প্রতি মুহূর্তে খোদার কাছে বিলাপ করেন। বিশ্বের তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ গার্মেন্টস কারখানা দুর্ঘটনার শিকারদের তিনিও একজন, যেটি এপ্রিল ২০১৩-এ ঘটেছিল। হতাহতের খতিয়ানে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১৩৩ জন শ্রমিক, পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১০০ জনেরও অধিক শ্রমিক। সেই দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের জন্য জীবন এখন এক বেদনাদায়ক সংগ্রাম।
পশ্চিমা বিশ্ব সেই খবরের শিরোনামগুলো দ্রুতই ভুলে গিয়েছিল, ওদিকে সস্তা আর কেতাদুরস্ত জামাকাপড় তৈরির জন্য আজীবনের মূল্য চোকাতে হয়েছিল দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের। দুর্ঘটনার অব্যবহিত পর আমি ভুক্তভোগীদের জীবন অনুসরণ করতে শুরু করি, তাদের জীবন; যাদের হয়তো একদিন আমরা ভুলতে বসব। সেইসব মানুষ যাদের জীবন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, যারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে পঙ্গুত্বের জীবন মেনে নিয়েছে, যারা প্রিয়জন হারিয়েছে, সেইসব পরিবার যারা পুনর্বাসন নয় বরং ভিক্ষুকের জীবনে পর্যবসিত হয়ে গেছে। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি কেননা আমি তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি এবং তারা তাদের জীবনে আমাকে প্রবেশ করতে দিয়েছেন, তাদের গল্পগুলো আমাকে শুনিয়েছেন। আমি প্রতিনিয়তই তাদের কাছ থেকে শিখি, বিষয়টির আরও গভীরে খতিয়ে দেখার জন্য চালিত হই।
এই শ্রমিকদের অনেকেই রাজধানী শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছেন, যেখান থেকে তারা ‘কেউ একজন’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই শহরে এসেছিলেন। বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে আমি আমার আলোকচিত্রসমূহকে ব্যবহার করতে চাই; ওয়ালমার্ট, নাইকি এবং ডিজনির মতো শক্তিশালী ব্র্যান্ডগুলিকে ন্যায্যমূল্য প্রদানে চাপ প্রয়োগ করতে চাই যাতে করে এই কারখানাগুলোয় শ্রম ও নিরাপত্তার মান বাস্তবায়িত করা যায়- যেনো কারও জীবন ও স্বপ্ন আর কখনও ভেঙে না যায়৷ বর্তমানে, আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের বদলে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক শিল্পকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।
কোনও একটি আলোকচিত্র তার ভিতরকার গল্পকে এমনভাবে বয়ে নিতে পারে যা অসংখ্য প্রবন্ধ, কলাম, সম্পাদকীয় কিংবা সেমিনার করতে পারে না। এই শিল্পকে বাঁচাতে এবং ত্রিশ লক্ষ শ্রমিক যারা এই শিল্পের চালিকা শক্তি তাদের প্রতি শোষণের অবসান ঘটাতে আমি আমার আলোকচিত্রগুলো উৎসর্গ করতে চাই। আসুন, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে করতে আমরা আরেকটি বিয়োগান্তক দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা না করি।